ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৮ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি, বিকাল ৩:৩০
বাংলা বাংলা English English

রবীন্দ্র জন্ম জয়ন্তীতে নওগাঁর কুঠিবাড়ি সেজেছে নতুন রুপে


নওগাঁ আত্রাই উপজেলার মনিয়ারী ইউনিয়নে কালীগ্রাম পরগনার নিজস্ব জমিদারী পতিসরে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছারী বাড়ি। ২৫ বৈশাখ কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬১তম জন্মোৎসব উপলক্ষ্যে নতুন রূপে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে কাছারী বাড়ির বাহির ও অন্দরের প্রতিটি কোণ। সেজে উঠেছে দেবেন্দ্র মঞ্চও।

‘যখন পড়বে না মোড় পায়ের চিহ্ন এই বাটে/ আমি বাইব না, আমি বাইবনা মোর খেয়া তরী এই ঘটে গো।’ বিশ্ব কবি রবীন্দ্র নাথ ঠাকুরের এই গান যেন তারই অনুপস্থিতি জানান দিচ্ছে আমাদের প্রতিনিয়ত। তার খেয়াতরী এই ঘটে থাক বা না থাক তবুও রবীন্দ্রপ্রেমীরা পতিসরে যেন তারই কন্ঠ আজও বাতাসে অনুভব করতে পারে। কেননা তার খেয়াতরী মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছে অনেকটা গভীরেই।

 

রোবরার (৮ মে) কবির জন্মোৎসবকে ঘিরে সেখানে নামবে রবীন্দ্র ভক্তদের ঢল। প্রধান অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করবেন, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার এমপি।

সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় নওগাঁ জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নেওয়া হয়েছে নানা কর্মসূচি। কর্মসূচি মধ্যে রয়েছে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কর্মময় জীবন ও স্মৃতি নিয়ে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আয়োজন করা হয়েছে গ্রামীণ মেলাও।

কবি প্রথম পতিসরে আসেন ১৮৯১ সালের ১৩ জুন। শেষ বিদায় নিয়েছিলেন ১৯৩৭ সালের ২৭ জুলাই। নদী পথে বজড়ায় চড়ে কবি বহুবার এসেছেন তার নিজস্ব জমিদারী কালিগ্রাম পরগনার পতিসর এই কাছারী বাড়িতে।

এই পতিসরে বসে কবি রচনা করেছেন কাব্য নাটিকা , বিদায় অভিশাপ, গোরা ও ঘরে বাহিরে। ছোট গল্পের মধ্যে রয়েছে প্রতিহিংসা, ঠাকুরদা ও ভারতবাসী প্রবন্ধ। এছাড়া তুমি সন্ধ্যার মেঘমালা/ তুমি আমার নিভৃত সাধনা, বধূ মিছে রাগ করোনাসহ অনেক কালজয়ী গান কবি এখানেই লিখেছিলেন।

দুই বিঘা জমি, আমাদের ছোট নদী চলে বাকে বাকে, তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে সব গাছ ছাড়িয়ের মতো অসংখ্য কবিতা তৈরি করেছিলেন মাটি ও মানুষের জন্য। তিনি বিভেদমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক দেশ ও জাতি গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিলেন।

কাছারী বাড়ির জাদুঘরে সংগ্রহের মধ্যে রয়েছে কবির দেয়াল ঘড়ি, লোহার সিন্দুক, খাট, টি-টেবিল, টি-পট, আয়না, নাগর বোটের এ্যাংকর, ট্রাক্টরের ভগ্নাংশ, কবির স্নানের বাথটাব, কবির বিভিন্ন বয়সের ছবি, ইজি চেয়ার, কৃষি ব্যাংকের লোহার সিন্দুক, কবির স্বহস্তে লিখিত ৬ পৃষ্ঠার চিঠিসহ নানান সামগ্রী। কবির এই বিশেষ দিনে তা আরও একটিবার দেখার জন্য রবীন্দ্রপ্রেমীরা জড়ো হবে এই স্থানটিতেও।

অধ্যক্ষ (অব.) ও রবীন্দ্র গবেষক প্রফেসর শরিফুল ইসলাম খান বলেন, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ নওগাঁর মানুষের কাছে গর্ব। কারণ তার নিজস্ব জমিদারী আত্রাই উপজেলার কালিগ্রাম পরগনা। রবীন্দ্রনাথ শিক্ষানুরাগী ছিলেন। তার ছেলের নামানুসারে রথীন্দ্রনাথ ইনস্টিটিউট খুলেছিলেন।

রবীন্দ্রনাথ নওগাঁর মানুষের কাছে হৃদয়ের মানুষ, কাছের মানুষ। তিনি নোবেল প্রাইজের অর্থ দিয়ে কৃষি ব্যাংক স্থাপন করেছিলেন। ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবস্থা তিনিই চালু করেছিলেন। তাই নওগাঁবাসীর দাবি, রবীন্দ্রনাথের নামে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা। রবীন্দ্রনাথের নামে যত জমি আছে, সেই জমির ওপরেই বিশ্ববিদ্যালয় করা সম্ভব বলে তারা মনে করছেন।

পতিসর জাদুঘরের দায়িত্ব প্রাপ্ত আবুল কালাম জানান, জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে নতুন নতুন ছবি টানানো হয়েছে। জাদুঘরে চলছে ধোয়া মোছা ও নতুন করে রং এর কাজ।

এদিকে পতিসরে বেড়াতে আসা বেশ কজন সময়কে জানান, রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি বিজরিত সব জায়গাই তাদের খুব প্রিয়। তবে এসব স্থান আরও সংস্কার করার প্রয়োজন রয়েছে। কারণ হিসেবে তারা বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যে যে দেশে ঘুরেছেন সেই সেই দেশের সরকার সেখানকার রুম ও ব্যবহৃত জিনিসপত্র সংরক্ষণ করে রেখেছে। স্মৃতি ধরে রাখতে তার নামে রাস্তা ও রবীন্দ্র প্রতিকৃতিও নির্মাণ করেছে।

রবীন্দ্র স্মৃতি সংগ্রাহক ও রবীন্দ্র অনুরাগী মতিউর রহমান মামুন বলেন, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ৪৬ বছরে আসা যাওয়ার মাধ্যমে যে স্মৃতিগুলো রেখে গিয়েছিল সেগুলো জমিদারী প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার পরপরই হারিয়ে গেছে। আমার ইচ্ছা ছিল সব স্মৃতি ফিরিয়ে পতিসরে পূর্ণাঙ্গ জাদুঘর করা। আমি তার চিঠিসহ বিভিন্ন সামগ্রী উদ্ধার করে দিয়েছি। তবে সেগুলো এখনও যথাযথভাবে সংরক্ষণ হয়নি।

তিনি আরও বলেন, সঠিকভাবে এসব সংরক্ষণ করা গেলে বিভিন্ন দেশের মানুষ কবির এসব স্মৃতিবিজড়িত জিনিস দেখার জন্য এদেশে ভিড় জমাতো। তাই তিনি সরকারের নিকট দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, বিশেষ তহবিল গঠন করে স্মৃতিগুলো সংরক্ষণ করে পূর্ণাঙ্গ জাদুঘর করার পাশাপাশি কবির স্মৃতি বিজড়িত নাগর নদী অবৈধ দখলের হাত থেকে রক্ষা জরুরি।
এদিকে নওগাঁ জেলা প্রশাসক খালিদ মেহেদী হাসান কবিগুরুর ১৬১তম জন্ম বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে অসাম্প্রদায়িক চেতনা সুখী সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ বিনির্মাণে সকলে মিলে একসঙ্গে কাজ করার প্রতি জোর দেন। সেই সঙ্গে উৎসবমুখর পরিবেশে দিবসটি পালিত হবে বলেও আশা ব্যক্ত করেন তিনি।

 

সব খবর