বছরের একমাত্র ফসল বোরা ধান রোপণ থেকে ঘরে তোলা পর্যন্ত নানা দুশ্চিন্তায় দিন কাটান হাওড়বাসী। পৌষে হাওড় থেকে পানি সরে যাওয়ার দিন গুনতে থাকেন তারা। ভাগ্য অনুকূলে থাকলে যথাসময়ে পানি সরে যায়। তবে এ বছর ধান রোপণের পর ১৪০ দিন অপেক্ষার আগেই চৈত্রে আকস্মিক পাহাড়ি ঢলে বৈশাখে ধান কাটার উৎসব বিলীন হয়ে যায়। তাই সবকিছু বিবেচনায় এনে ৯০ থেকে ১০০ দিনে যাতে এ ধান ঘরে তোলা যায় সেই উদ্ভাবনে মনোযোগ দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
কৃষকের কপাল পোড়ার দৃশ্য নতুন নয়। বছরের পর বছর হাওড়পাড়ের মানুষ বিস্তীর্ণ এলাকায় বোরো ধান লাগিয়ে আতঙ্ক আর উৎকণ্ঠায় দিন কাটায়। ২০১৭ সালে সুনামগঞ্জের হাওড়ের এক লাখ ৬২ হাজার হেক্টর জমির ধান নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর আতঙ্ক স্থায়ী রূপ নেয়। এবারের পাহাড়ি ঢলে আবার অনেক কৃষকের স্বপ্ন ভঙ্গ হয়।
বন্যা ছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ব্রি ধান ২৮ চিটায় পরিণত হচ্ছে বলে কৃষক অভিযোগ করেন। তারা বলেন, বিশেষ করে চৈত্র মাসের মাঝামাঝি যে ধান কাটা যায়, এতে থেকে আমরা কৃষকরা উপকৃত হই। কিন্তু ক্ষেতে হাঁটুপানি, এভাবে তো কাজ করা সম্ভব না।
তাই কৃষকের দুর্দশার কথা চিন্তা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে নতুন জাতের ধান উদ্ভাবনের জন্য গবেষকদের প্রতি আহ্বান জানান কৃষি কর্মকর্তারা। সিলেট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক কাজি মজিবুর রহমান বলেন, শীতের সময় অর্থাৎ যখন ফ্লাওয়ারিং হয় তখন যদি রাতে ঠান্ডা থাকে এবং দিনের বেলার গরম থাকে। সেই ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, চিটার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। আমরা এ সমস্যার সমাধান চাই।
কৃষক যাতে ৯০ থেকে ১০০ দিনে মধ্যে বোরো ধান ঘরে তুলতে পারেন সে লক্ষ্য আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ও বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. আবুল কাশেম বলেন, আশা করা যায়, এটি খুব শিগগিরই প্রকাশিত হবে। দুই বা সর্বোচ্চ তিন বছরের মধ্যে আমরা হাওরের জন্য একটি উপযুক্ত ধানের জাত পাব।
উল্লেখ্য, চলতি বছর সিলেট বিভাগে চার লাখ ৭৯ হাজার হেক্টর জমিতে রোবো ধান আবাদ করা হয়।