ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৮ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি, বিকাল ৫:৩৭
বাংলা বাংলা English English

বিদ্যুৎকেন্দ্রে দুর্নীতি-অনিয়ম
প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে


দেশে দুটি কয়লা ও একটি এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য জমি কেনার ক্ষেত্রে ৩৯০ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে বলে তথ্য প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ –টিআইবি। ‘বাংলাদেশে কয়লা ও এলএনজি প্রকল্প : সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক একটি গবেষণা প্রতিবেদন এই তথ্য প্রকাশ করা হয়। এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আলোচ্য তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে জমি ক্রয়-অধিগ্রহণ-ক্ষতিপূরণ-এই তিন ক্ষেত্রে দুর্নীতি হয়েছে এবং দুর্নীতিলব্ধ টাকা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ভূমি অধিগ্রহণ শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারী, এনজিওকর্মী ও বিদ্যুৎকেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাংশের মধ্যে ভাগাভাগি হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, জমি অধিগ্রহণ ও ক্ষতিপূরণ দিতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয়েছে চট্টগ্রামের বাঁশখালী কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রে। এ প্রকল্পে দুর্নীতি হয়েছে ২৫৫ কোটি টাকার। এ ছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীর এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জমি কেনায় ১১৯ কোটি টাকা এবং বরিশালের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে ১৬ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। টিআইবি আরও বলেছে, আলোচ্য তিন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে পরিবেশ সংরক্ষণে কোনো গুরুত্বই দেওয়া হয়নি। পরিবেশ আইন লঙ্ঘন করে সমীক্ষা ছাড়াই এই তিন প্রকল্পের কাজ চলছে। টিআইবির মতে, স্বার্থান্বেষী মহলের ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতি রোধ করা বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি খাতের অন্যতম চ্যালেঞ্জ। এ ছাড়াও দাতা ও দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীনির্ভর পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ফলে সংশ্লিষ্টরা তাদের কাছে অনেকাংশেই জিম্মি হয়ে পড়েছে। সংকট থেকে উত্তরণের জন্য টিআইবি সাত দফা সুপারিশ পেশ করেছে। এগুলো হলো-ভবিষ্যতে কোনো ধরনের জীবাশ্ম জ¦ালানিনির্ভর প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া যাবে না; উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে যেসব ঋণচুক্তি হয়েছে, তার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে; সব নথি প্রকাশ করতে হবে; চলমান ঝুঁকিপূর্ণ কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো স্থগিত করতে হবে; আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য সমীক্ষা করে সামনে এগোতে হবে এবং নবায়নযোগ্য জ¦ালানি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, তিন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে টিআইবি কথিত দুর্নীতির অভিযোগ জাতির জন্য এক বড় উদ্বেগের বিষয়। বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি খাতে দুর্নীতির অভিযোগ আগেও উঠেছিল। এবার টিআইবির গবেষণালব্ধ তথ্য থেকে যা পাওয়া গেল, তাতে সরকারের উচ্চ মহলের টনক নড়া উচিত। আমরা মনে করি, উত্থাপিত অভিযোগুলোর সুষ্ঠু ও পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হওয়া দরকার। তদন্তসাপেক্ষে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায়ও নিয়ে আসতে হবে। এ ছাড়া বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি খাতের সংকট উত্তরণে টিআইবি যেসব সুপারিশ করেছে, সেগুলোও যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। আমরা আশা করি, সরকার এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

সব খবর