ঢাকা, শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৯শে রমজান, ১৪৪৫ হিজরি, দুপুর ২:০০
বাংলা বাংলা English English

ছাতক-দোয়ারাবাজারের ৮ হাজার মানুষ পানিবন্দি


ভারি বর্ষণ এবং উজানের ঢলে সুনামগঞ্জের ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলার সুরমা, দোহালিয়া, দোয়ারাবাজার সদর ও ছাতক উপজেলার ইসলামপুর, নোয়ারাই, সিংচাপইর, উত্তর খুরমা, ছাতক সদর, জাউয়াবাজার কালারুকা সহ ১০টি ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে।

দোয়ারাবাজার উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের এক হাজার ২০০ পরিবার এবং এক হাজার গবাদি পশু। ছাতক উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের ছয় হাজার পরিবার ও চার হাজার গবাদিপশু পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। দুইটি উপজেলায় ২টি আশ্রয়কেন্দ্রে শতাধিক পরিবার আশ্রয় নিয়েছে।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পানি বেড়েছে। বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত পানি স্থির হয়ে আছে। আজ সন্ধ্যা ৬টায় সুনামগঞ্জের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে ছাতকে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ১০০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

ছাতক উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সুফি আলম সোহেল জানান, ইসলামপুর ইউনিয়নের বৈশাকান্দি বাহাদুরপুর, সৈদাবাদ, দক্ষিণ গনেশপুর ও মধ্য গনেশপুরের সহস্রাধিক বাড়ি ঘর ও রাস্তা ঘাটসহ ছাতকের বিভিন্ন এলাকা বন্যায় প্লাবিত।

 

তিনি বলেন, পানিবন্দি মানুষ ডুবে যাওয়া কাঁচা বাড়ি ঘর ও গৃহপালিত পশু নিয়ে বিপাকে। ইসলামপুর ইউনিয়নের সহস্রাধিক কৃষক ধানের জমি বৈশাখ মাসের প্রথম থেকেই উপর্যুপরি পাহাড়ি ঢল ও চলমান বন্যায় ফসলহানির ফলে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে।

নোয়ারাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেওয়ান পীর আব্দুল খালেক রাজা বলেন, বন্যায় ক্ষেতের ফসল, পুকুরের মাছ ঘরবাড়ি সব ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। অনেক গ্রামের ঘরবাড়ি পানিতে ডুবে আছে। এছাড়া সুনামগঞ্জ সদর তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে বন্যা পরিস্থিতির অপরিবর্তিত রয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, সদরে ২০০, বিশ্বম্ভরপুরে ১৫০, তাহিরপুরে ৭০, ছাতকে ১০০ এবং দোয়ারাবাজারে ২০০ হেক্টর জমির উচ্চ ফলনশীল জাতের ধানসহ মোট ৭২০ হেক্টর জমির ধান পানিতে নিমজ্জিত হয়ে আছে। এসব উপজেলায় ৭০ হেক্টর জমির বাদাম ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে তিন হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। সুনামগঞ্জ শহরের সাব বাড়িরঘাট ও পশ্চিমবাজার এলাকায় সুরমা নদীর পানি উপচে দোকানপাটে পানি ঢুকছে।

এছাড়া শহরের নবীনগর, ষোলঘর, উকিলপাড়াসহ বেশকিছু নিচু এলাকায় বানের পানি ঢুকে পড়েছে। পাহাড়ি ঢলে ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলার নিচু এলাকার সড়কগুলো ডুবে যাওয়া সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে ১০২ এবং ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ৩৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে বলে জানায় পানি উন্নয়ন বোর্ড।

ছাতক পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী তৌহিদুল ইসলাম তুহিন বলেন, ছাতকে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ১৬৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সকাল থেকে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত ছিল। বিকেল থেকে পানি স্থির আছে। বেশ কিছু এলাকায় পানির গড়ান যাচ্ছে। উপজেলা পরিষদের ১ ফুট পানিতে নিমজ্জিত আছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, পানি দ্রুত নেমে গেলে ধানের কোনো ক্ষতি হবে না তবে বাদাম চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেছেন।

 

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহরুল ইসলাম বলেন, উজানে বৃষ্টিপাত না হলে পানি কমতে পারে বৃষ্টিপাত হলে পানি বাড়বে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।

আগামী ৪৮ ঘণ্টায় উজানে মেঘালয়, আসাম এবং হিমালয় প্রদেশে ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, তিস্তা, সুরমা, কুশিয়ারা এবং উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদ-নদী সমূহের পানি সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে।

জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানিয়েছেন ছাতক ও দোয়ারাবাজার এবং বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার পানিবন্দি মানুষের জন্য ১৫ মেট্রিকটন চাল ও ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৫টি উপজেলা বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে।

সব খবর