ঢাকা, শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি, রাত ১২:১২
বাংলা বাংলা English English

কুসিক নির্বাচন: কোটিপতি সাক্কু, নগদ টাকা নেই আ.লীগ প্রার্থী রিফাতের


কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে মেয়র পদে ছয় প্রার্থীর হলফনামায় দেওয়া কারো কারো তথ্য অনেকটা চমকপ্রদ।

এতে দেখা যায়, ২০১২ সালের প্রথম সিটি নির্বাচনের পর কয়েক গুণ সম্পদ বেড়েছে বিএনপি থেকে পদত্যাগ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া সদ্য সাবেক মেয়র মো. মনিরুল হক সাক্কুর। তবে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী আরফানুল হক রিফাতের হলফনামায় উল্লেখ করা হয়েছে তার কোনো নগদ টাকা নেই।

প্রার্থীদের মধ্যে ফৌজদারি মামলায় শীর্ষে রয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক দল থেকে পদত্যাগ করে প্রার্থী হওয়া নিজাম উদ্দিন কায়সারের। অপরদিকে সম্পদের দিক থেকে পিছিয়ে থাকা ছয়জনের মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আহসান বাবুল, নিজাম উদ্দিন কায়সার ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী রাশেদুল ইসলামের কোনো গাড়ি নেই। প্রার্থীদের দাখিল করা হলফনামা থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

নৌকার প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত

নৌকার প্রার্থী আরফানুল হক রিফাতের শিক্ষাগত যোগ্যতা বিএ। তার জন্ম ১৯৫৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারি। তিনি বর্তমানে কোনো ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত নন। ২০০১ সালের একটি হত্যা মামলা থেকে তিনি অব্যাহতি পেয়েছেন। পেশায় ঠিকাদার। তার নগদ কোনো অর্থ নেই।

আয়ের উৎস হিসেবে কৃষিখাত থেকে ১০ হাজার, বাড়ি, দোকান ভাড়া বাবদ তার বার্ষিক আয় ৫ লাখ টাকা। ব্যবসা থেকে বার্ষিক আয় ১৭ লাখ ১১ হাজার ৮০০ টাকা। প্রার্থীর ওপর নির্ভরশীল পরিবারের সদস্যদের আয় দেখানো হয়েছে ৪ লাখ ৬৬ হাজার ৭৬২ টাকা এবং অন্যান্য উৎস থেকে আয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৩ হাজার ৯৫ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা আছে ৬ লাখ ১২ হাজার ৪৯৫ টাকা। স্ত্রীর নামে আছে ৩৩ হাজার ২০০ টাকা।

 

রিফাতের নিজের নামে পোস্টাল ও বিভিন্ন সঞ্চয়পত্র আছে ৭৮ লাখ ৬৭ হাজার ৪৫৪ টাকার। যানবাহনের মধ্যে আছে একটি জিপ গাড়ি, যার মূল্য ১ কোটি ২ লাখ টাকা, ২০ লাখ টাকার একটি প্রাইভেট কার আছে। তার ও স্ত্রীর স্বর্ণ আছে ৫০ ভরি। ইলেকট্রনিক সামগ্রী নিজ নামে ৩ লাখ ও স্ত্রীর নামে ৫০ হাজার টাকা মূল্যের। অন্যান্য আসবাব নিজের নামে ৩ লাখ ও স্ত্রীর নামে আছে ৮৫ হাজার টাকার। অন্যান্য ব্যবসায় তার নিজের নামে মূলধন আছে ৬ লাখ টাকা।

প্রার্থী রিফাতের স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে আছে কোটবাড়ি এলাকার সালমানপুরে ১৭ শতক, স্ত্রীর নামে ৬ শতক জমি। ফেনীতে যৌথ মালিকানায় আছে একটি আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন, যার মূল্য ৩০ লাখ টাকা। ঢাকায় তার ৪০ লাখ টাকার একটি ও কুমিল্লায় আছে ৩০ লাখ টাকার (কেনার সময়) একটি অ্যাপার্টমেন্ট।

মনিরুল হক সাক্কু

তিনি কুসিকের দুবারের মেয়র। বিএনপি থেকে পদত্যাগ করে তিনি স্বতন্ত্র পদে প্রার্থী হয়েছেন। শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি। তার জন্ম ১৯৬২ সালের ১১ ডিসেম্বর। তার বিরুদ্ধে বর্তমানে দুদক ও আয়কর আইনের দুটি মামলা বিচারাধীন। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে অতীতে দায়ের করা হত্যাসহ ফৌজদারি ও অন্যান্য আইনে ১০টি মামলা থেকে অব্যাহতি/খালাস পেয়েছেন।

তবে তার নিজের ও স্ত্রীর সম্পদ বেড়েছে কয়েক গুণ। ২০১৭ সালে হলফনামায় সাক্কুর নিজ নামে নগদ ৮৭ লাখ ৭৭ হাজার ৩০৬ টাকা ছিল। এবার নগদ আছে ১ কোটি ৩৭ লাখ ৫৯ হাজার ৮৯২ টাকা। স্ত্রীর নামে ২০১৭ সালে ছিল ৫৫ লাখ ৮৬ হাজার ৫২৩ টাকা, এবার আছে ৯৯ লাখ ১৩ হাজার ৮২১ টাকা।

এ বছরের তথ্যে তার বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট, দোকান ও অন্যান্য খাতে আয় দেখানো হয়েছে ৪ লাখ ৮ হাজার টাকা। এ খাতে নির্ভরশীলদের কাছ থেকে আয় দেখানো হয়েছে ৬৪ লাখ ৬৬ হাজার ৭৩৬ টাকা। ব্যবসা খাতে নির্ভরশীলদের আয় ২০ লাখ ৭০ হাজার টাকা দেখানো হয়েছে। প্রার্থীর শেয়ার, সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক আমানত রয়েছে ৩ লাখ ১ হাজার ৬৯৭ টাকা। তিনি মেয়র হিসেবে বার্ষিক সম্মানী ভাতা পেয়েছেন ১৬ লাখ ২০ হাজার টাকা।

 

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নিজের নামে জমা আছে ২ লাখ ৯৪ হাজার ২৭ টাকা। স্ত্রীর নামে ব্যাংকে আছে ৯ লাখ ৫৪ হাজার ৭৫৭ টাকা। বিভিন্ন কোম্পানিতে জমা আছে ২ লাখ টাকা। পোস্টাল সঞ্চয়পত্র ৫০ লাখ ও স্ত্রীর নামে আছে ৩৯ লাখ ৫৯ হাজার ৩৬৪ টাকা। যানবাহনের মধ্যে আছে নিজের নামে একটি ল্যান্ডক্রুজার জিপ ও স্ত্রীর নামে একটি জিপ গাড়ি। স্বর্ণালংকারের মধ্যে নিজ ও স্ত্রীর নামে আছে ২০ তোলা স্বর্ণ। ইলেকট্রিক ও আসবাবের মধ্যে আছে ১ লাখ ৪৭ হাজার টাকার মালামাল। স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে নিজের নামে ২০ একর কৃষি জমি ও ১৪৬ শতকের একটি পুকুর, নাল জমি আছে ১০৪ শতক। স্ত্রীর নামে আছে ১.২৩ একর জমি।

নিজের নামে রাজধানী ঢাকায় পৃথক ৫টি স্থানসহ কুমিল্লা নগরীর বজ্রপুর এলাকায় তার জমি রয়েছে মোট ৪১ শতক। স্ত্রীর নামে রাজধানীর বসুন্ধরায় আছে ৩ কাঠার প্লট। প্রার্থীর নিজের নামে ফ্ল্যাট রয়েছে কুমিল্লা নগরীতে ২টি, স্ত্রীর নামে নগরীর রেসকোর্স এলাকায় বহুতল ভবন ও রাজধানীর ধানমন্ডিতে স্ত্রীর নামে দোকান রয়েছে। এ ছাড়া স্ত্রীর নামে নগরীর বজ্রপুর এলাকায় বহুতল ভবন ও ঢাকায় ২টি ফ্ল্যাট রয়েছে। তার কোনো দায়দেনা নেই।

মাসুদ পারভেজ খান ইমরান

তিনি প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আফজল খানের ছেলে। ইমরানের শিক্ষাগত যোগ্যতা বিএসএস। তার বিরুদ্ধে ২০১৬ ও ২০১৯ সালের পৃথক ২টি মামলা বিচারাধীন। তিনি অতীতে ২টি ফৌজদারি মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন। এ ছাড়া একটি মামলায় তার বিরুদ্ধে সাজার আদেশ হাইকোর্টে স্থগিত আছে।

 

কৃষিখাত থেকে তার আয় ২০ হাজার টাকা, ব্যবসা থেকে আয় ১৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা, অন্যান্য উৎস থেকে আয় ৮ হাজার ২০৫ টাকা। তার স্ত্রীর বার্ষিক আয় ৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পত্তির মধ্যে নগদ টাকা আছে ২ লাখ ৪২ হাজার ৭৪২ টাকা, ব্যাংকে নিজ নামে জমা আছে ৩ লাখ ১৭ হাজার ২৫৮ টাকা। স্ত্রীর নামে নগদ ও ব্যাংকে আছে ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

যানবাহনের মধ্যে আছে নিজের নামে ৫২ লাখ টাকা দামের একটি জিপ, স্ত্রীর নামে ১১ লাখ ৫০ হাজার টাকা দামের একটি প্রাইভেট গাড়ি আছে। নিজের ২৫ তোলা ও স্ত্রীর ৫০ তোলা স্বর্ণ আছে। নিজ ও স্ত্রীর নামে ইলেকট্রনিক ও অন্যান্য আসবাবপত্র আছে ৪ লাখ টাকার। নিজের নামে অন্যান্য ব্যবসায় মূলধন আছে ৫ লাখ টাকার। স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে নিজের নামে নগরীর শাকতলা এলাকায় ৭৭.৬৬ শতক জমি আছে। লালমাই পাহাড়ে বাগান আছে ১.১২ একরের।

নিজাম উদ্দিন কায়সার

তিনি স্বেচ্ছাসেবক দল থেকে পদত্যাগ করে স্বতন্ত্র পদে প্রার্থী হয়েছেন। তার জন্ম ১৯৮২ সালের ৩১ অক্টোবর। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা বিকম। তার বিরুদ্ধে বিচারাধীন ফৌজদারি মামলা রয়েছে ৮টি। খালাস পেয়েছেন ৪টি মামলা থেকে। দ্রুত বিচার আইনের একটি মামলার কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। বার্ষিক আয়ের উৎস দেখানো হয়েছে, চাকরি থেকে ৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা, অন্যান্য উৎস থেকে আয় দেখানো হয়েছে ৪ হাজার ৬২৭ টাকা। তার নগদ আছে ৩৮ লাখ ৭২ হাজার ৯৩৫ টাকা। ব্যাংকে জমা আছে ৩ লাখ ২ হাজার ৪৯৭ টাকা। বেসরকারি বিভিন্ন কোম্পানি থেকে আয় ৪০ হাজার টাকা। নিজের ৩০ তোলা ও স্ত্রীর ২০ তোলা স্বর্ণ আছে। ইলেকট্রনিক সামগ্রী আছে ১ লাখ ৯ হাজার ও স্ত্রীর নামে ইলেকট্রনিক ও আসবাবপত্র আছে ৭ লাখ টাকার।

 

রাশেদুল ইসলাম

তিনি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী। তিনি নগরীর আসাদনগর এলাকার বাসিন্দা। তার বাবা আবদুল লতিফ ও মা রেজিয়া খাতুন। তার জন্ম ১৯৭৯ সালের ১ জানুয়ারি। তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। নগদ টাকা আছে ৫০ হাজার। ব্যাংকে আছে ২ লাখ ৪২৮ টাকা। অনাবাদি জমি আছে ৮.২৫ শতক।

কামরুল আহসান বাবুল

তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী। তার জন্ম ১৯৫৮ সালের ২১ জুন। তার বিরুদ্ধে ২টি মামলা আছে। ব্যবসা থেকে তার বার্ষিক আয় ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। নগদ টাকা আছে ৩ লাখ ৫০ হাজার। ব্যাংকে আছে ৫ হাজার টাকা। ইলেকট্রনিক সামগ্রী ও আসবাবপত্র আছে ৪০ হাজার টাকার। অস্থাবর সম্পদ আছে ২ লাখ ৯০ হাজার টাকার। ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকার অনাবাদি জমি আছে। ১.৭৫ শতক জমির মধ্যে একটি নির্মাণাধীন ভবন আছে।

তফসিল অনুযায়ী, আগামী ২৬ মে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার। ২৭ মে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে। ১৫ জুন ১০৫ ভোটকেন্দ্রে ইভিএমে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

সব খবর