ঢাকা, শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৯শে রমজান, ১৪৪৫ হিজরি, দুপুর ১২:৩৭
বাংলা বাংলা English English

ছড়িয়ে পড়ছে মাদক যেকোনো মূল্যে বন্ধ করতে হবে


ভয়ংকর মাদক ইয়াবার বিস্তার শুধু শহরাঞ্চলে সীমাবদ্ধ নেই, প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছে। পাচার হয়ে আসছে ক্রিস্টাল ম্যাথ, আইস, খাতসহ নতুন নতুন মাদক। বিভিন্ন সময় দেশে হেরোইন, কোকেনের অনেক বড় চালানও ধরা পড়েছে। থেমে নেই পুরনো মাদকের ছড়িয়ে পড়া। প্রায়ই মণে মণে গাঁজা উদ্ধার হচ্ছে। চরস, এলএসডি বা পুরনো অন্যান্য মাদক তো আছেই। প্রকাশিত খবরে জানা যায়, অতি সম্প্রতি রাজধানীর পল্টন ও বনশ্রী এলাকা থেকে তিন কেজি আফিমসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। উদ্ধার করা তিন কেজি আফিমের আনুমানিক বাজারমূল্য পৌনে তিন কোটি টাকা। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) তথ্য অনুযায়ী মাঝেমধ্যে আফিমের চালান ধরা পড়লেও গত ১০-১২ বছরের মধ্যে একসঙ্গে এত আফিম আর উদ্ধার হয়নি। তার অর্থ নতুন-পুরনো উভয় ধরনের মাদক দেশে দেদার প্রবেশ করছে। বাংলাদেশে সাধারণত দুভাবে মাদক প্রবেশ করে। একটি হচ্ছে, মাদক পাচারের আন্তর্জাতিক রুটের অংশ হিসেবে বাংলাদেশে প্রবেশ করা এবং পরে এখান থেকে অন্য কোনো দেশে পাচার হওয়া। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে, স্থানীয় মাদকাসক্তদের চাহিদা মেটাতে মাদক পাচার হয়ে আসা। ধারণা করা হচ্ছে, আফিমের এই বড় চালানটি আন্তর্জাতিক রুটে পাচারের অংশ। কিন্তু ডিএনসি এখনো সে তথ্য নিশ্চিত করেনি। তারা আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে। তাদের মতে, বাংলাদেশে আফিম আসে মূলত আফগানিস্তান থেকে। ওষুধের কাঁচামাল হিসেবেও আফিম আনা হয়। উদ্ধার করা আফিমের চালানটি ভারত থেকে ফেনী সীমান্ত দিয়ে দেশে প্রবেশ করেছিল। আরো জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমেই জানা যাবে আফিমের উৎস ও গন্তব্য কোথায় ছিল। সাধারণত আন্তর্জাতিক মাদক কারবারিরা চোরাচালানের জন্য সেসব দেশকেই বেছে নেয়, যেখানে মাদক নিয়ন্ত্রণে বড় ধরনের দুর্বলতা রয়েছে। তারা নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর অসৎ সদস্যদের কিনে নেওয়ার চেষ্টা করে। তারপর দেশীয় কারবারিদের নিয়ে সিন্ডিকেট গড়ে তোলে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাংলাদেশে মাদকের অনুপ্রবেশ ও বিস্তার ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। এর প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে সীমান্তে সঠিক নজরদারির অভাব, নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীগুলোর নানা ধরনের দুর্বলতা, দুর্নীতি এবং এসব সংস্থার কিছু সদস্যের অনৈতিক সম্পৃক্ততা, বিচারব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রতা, আইনের অস্পষ্টতা ইত্যাদি। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মাদক কারবার এখনই কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে দক্ষিণ আমেরিকার দুর্র্ধষ ড্রাগ কার্টেলগুলোর মতো কার্টেল বাংলাদেশেও গড়ে উঠতে পারে। তখন এদের নিয়ন্ত্রণ করাও কঠিন হয়ে পড়বে। মাদক শুধু তরুণসমাজকে ধ্বংস করে না, দেশকেও ধ্বংসের পথে নিয়ে যায়। বাংলাদেশে উন্নয়নের যে ধারাবাহিকতা তৈরি হতে যাচ্ছে, মাদক নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে সেই ধারাবাহিকতাও ক্ষুণœ হতে পারে। আমরা আশা করি, মাদক নিয়ন্ত্রণে সরকার সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করবে।

সব খবর