ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ৯ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি, সকাল ১০:২৮
বাংলা বাংলা English English

ঈদের দিন শান্তর জানাজা: কুমিল্লায় কুরবানি হয়নি কিনে রাখা ১২ গরু


কুমিল্লার দেবিদ্বারে ঈদের আগের দিনে মেহেদী হাসান শান্ত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ৫২ পরিবারের মধ্যে কুরবানি ও ঈদ আনন্দ নেই। রোববার সারা দেশে পবিত্র ঈদুল আজহা অনুষ্ঠিত হলেও উপজেলার নুরপুর গ্রামে মেহেদী হাসান শান্তর বাড়িতে চলে শোকের মাতম। পুত্র শোকে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন শান্তর মা। কোরবানির জন্য ক্রয় করা ১২টি গরু ও বেশ কয়েকটি ছাগল কুরবানি করেনি শান্তর বাড়ির লোকজন।

এদিকে ঈদের দিন রোববার বিকালে ময়নাতদন্ত শেষে শান্তর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে জানাজা নামাজটি হয়ে উঠে প্রতিবাদ মুখর। হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার চান স্থানীয়রা।

ওই সময় হত্যাকাণ্ডের হুকুমদাতা হিসেবে কুমিল্লা উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আবু কাউছার অনিককে জানাজা নামাজোত্তর আলোচনায় অংশ নিতে দেননি মুসল্লিরা।

এ সময় মেহেদী হাসান শান্ত হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার চেয়ে বক্তব্য রাখেন দেবিদ্বার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ, ফতেহাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান মাসুদ, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোসলেহ উদ্দিন সরকার ও নিহত শান্তর চাচা ফিরোজ সরকার প্রমুখ। ওই সময় আরও উপস্থিত ছিলেন জাফরগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহিদুল আলম, এডভোকেট শাহাদাৎ হোসেন শিমুল, উপজেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক কাউছার হায়দার।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শনিবার বিকালে উপজেলার নূরপুর শাহ ফাতেমি ইবতেদায়ি হাফেজিয়া নূরানি মাদ্রাসা ও এতিমখানায় একটি সভা ছিল। সভার পূর্বে নূরপুর গ্রামের আমেরিকা প্রবাসী মো. জসীম উদ্দিনের ছেলে সাজিদের সঙ্গে স্থানীয় সাদ্দাম, আল আমিন, সগির ও বায়েজিদের তর্ক হয়। পরে এ নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পরে তারা। এলোপাথাড়ি ছুরিকাঘাতে শান্তসহ ৫ জন আহত হয়। তাদের দ্রুত দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার পর ওই দিন সন্ধ্যা ৬টায় কর্তব্যরত চিকিৎসক শান্তকে মৃত ঘোষণা করে।

এ বিষয়ে রাতেই শান্তর বাবা জাকির হোসেন সরকার বাদী হয়ে আল আমিন ও সাদ্দামসহ ২৬ জনকে আসামি করে দেবিদ্বার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। রাতেই পুলিশ অভিযান চালিয়ে মামলার অভিযুক্ত আসামি সাদ্দাম ও মোকলেছকে গ্রেফতার করে।

এ বিষয়ে মামলার বাদী শান্তর বাবা জাকির হোসেন সরকার জানান, আমার ছেলের হত্যাকারীদের আশ্রয় প্রশ্রয় দেয় আবু কাউছার অনিক। গত শুক্রবার মসজিদে প্রকাশ্যে অনিক বলেন- গরু কুরবানির সঙ্গে মানুষও কুরবানি করবে। তার একদিন পর আমার ছেলেকে অনিকের অনুসারীরা হত্যা করে। তারা আমার ছেলেকে হত্যা করেই শান্ত হয়নি, মামলা তুলে নিতে হুমকি ধমকি দিচ্ছে। ঈদের দিন সকালে মামলা তুলে নিতে আমাকে জোরপূর্বক দেবিদ্বারে ধরে নিয়ে যায় অনিক।

অভিযোগের বিষয়ে কুমিল্লা উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আবু কাউছার অনিক জানান, আমার বিরুদ্ধে আনিত সব অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। মামলা তুলতে নয়! মামলা থেকে একজন আসামির নাম বাদ দিতে গ্রামে ৭-৮ জনের সিদ্ধান্তের কারণে বাদীকে নিয়ে থানায় যাই। কিন্তু তিনি থানায় গিয়ে উল্টে যায়। সুষ্ঠুভাবে তদন্তের মাধ্যমে শান্ত হত্যার বিচার হোক আমিও চাই।

এ ব্যাপারে দেবিদ্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কমল কৃষ্ণ ধর জানান, নিহত শান্তর বাবা বাদী হয়ে ৬ জনের নামীয় এবং আরও অজ্ঞাতনামা ১৫-২০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। রাতেই পুলিশ অভিযান চালিয়ে এজহারভুক্ত আসামি সাদ্দাম ও মোকলেছকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের রোববার আদালতে পাঠানো হয়।

সব খবর