একটা সিনেমার ইনকাম কীভাবে হয় বা মুভি হিট না ফ্লপ, সেটা কে নির্ধারণ করে? এই হিট, না ফ্লপের নির্ধারক হলো বক্স অফিস। বক্স অফিস বিষয়টি আসলে কী? কেন এই বক্স অফিস নিয়ে এত মাতামাতি, একই সঙ্গে কীভাবে একটি সিনেমার ভাগ্য নির্ধারক হয়ে ওঠে বক্স অফিস?
বক্স অফিস মূলত টিকিট ঘর অর্থাৎ দর্শকরা যেখান থেকে মুভির টিকিট কিনে থাকেন। আর এই টিকিট বিক্রির ওপর নির্ধারণ করে মুভির আয়ের বিষয়টি। যে আয় বলে দেয় মুভিটির বাণিজ্যিক অবস্থা, যা থেকে কোনো মুভির আয় আবার ভাগ্য দুটিই নির্ধারণ হয়ে থাকে। যেমন দেশের বাইরে, বলিউড বক্স অফিসে দাঁপিয়ে বেড়ানো সাম্প্রতিক কালের সুপার হিট মুভির কথা যদি বিবেচনা করি, তাহলে এমন অসংখ্য সিনেমা দেখতে পাব, পুষ্পা, কেজিএফ কিংবা দাবাং-এর মতো মুভি আছে।
তবে বাংলাদেশের সিনেমাজগতের প্রেক্ষাপটের কথা বলতে গেলে, কোনো সিনেমার ব্যবসা নির্ধারণের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট করে কোনো বক্স অফিস নেই। তাই সিনেমার নির্মাতা প্রযোজক যারা আছেন তাদের আয়ের দিকটি বিবেচনা করেই এই ফ্লপ হিটের সিদ্ধান্তে আসতে হয়।
তবে দেশ-বিদেশে বক্স অফিস নিয়ে এত মাতামাতির কারণ অবশ্য একটা আছে, সেটি হলো, বক্স অফিস কালেকশনকে দর্শকদের সিনেমার প্রতি আগ্রহের প্যারামিটার হিসাবে দেখা হয়। তবে একটি পারফেক্ট সিনেমার বৈশিষ্ট্য হলো, সিনেমার শক্তিশালী গল্প, গল্পের সঙ্গে অভিনেতা-অভিনেত্রীর মানানসই, সামঞ্জস্যতা, পারদর্শিতা এবং সিনেমাটোগ্রাফি। তবেই কোনো সিনেমা দর্শকের আকর্ষণ কাড়বে।
তাদের আগ্রহ ধরে রাখবে। অনেক সময় ভালো গল্প,কাজ হওয়া সত্ত্বেও দর্শকের টানতে ব্যর্থ হয়, বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে। এর পেছনে অবশ্য সিনেমার প্রচারণার কমতিকে দায়ী করা যেতে পারে।
এদিকে, বাইরের দেশের বক্স অফিসের কথা যদি বলি, তাহলে একটি মুভিকে ফ্লপ ধরা হয় তখন, যখন এর বাজেট খরচ তুলতে এর সঙ্গে যারা সংশ্লিষ্ট আছেন, তাদের হিমশিম খেতে হয়। তবে এখানে যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি বলে রাখা ভালো, সেটি হলো এই বক্স অফিস বা কোনো মুভি সফল-ব্যর্থ হওয়ার দায় তিন ব্যক্তির ওপর আবর্তিত। মানে পুরো প্রসেসটা একটা চক্রের মধ্য দিয়ে যায়: প্রথমে প্রযোজক, তারপর ডিস্ট্রিবিউটর, এরপর শেষ ধাপ অর্থাৎ হল মালিক।
প্রযোজকরা তাদের বানানো ছবিগুলো বিভিন্ন ডিস্ট্রিবিউটর কোম্পানির কাছে বিক্রি করেন। আবার ডিস্ট্রিবিউটরদের মধ্যেও দুই ভাগ আছে, একটা বড় নামকরা কোনো কোম্পানি আরেকটা সাব-ডিস্ট্রিবিউটর কোম্পানি। তারাই মুভিটি হল মালিকদের কাছে একটা নিদির্ষ্ট মূল্যে বিক্রি করে।
এবার আসি শেষ ধাপটি মানে সিনেমার আয় বৃদ্ধির পেছনে হল মালিকদের ভূমিকা কী? ডিস্ট্রিবিউটরদের কাছ থেকে কিনে হল মালিকরা মুভিটি হলে চালিয়ে ব্যবসা করেন। অর্থাৎ, ডিস্ট্রিবিউটর আর হল মালিকরা একটি সিনেমায় যে বিনিয়োগ করছেন, যেই প্রযোজকের কাছ থেকে কিনছেন, সেই বিনিয়োগের টাকা পুরোপুরি তুলতে সক্ষম হলেই সেই মুভিটিকে দেয়া হবে হিটের তকমা।
এখানে অবশ্য প্রযোজকরা একটু সেফ জোনে থাকারই চেষ্টা করেন। তারা মুভি বানানোর খরচ থেকে বেশি পরিমাণেই ডিস্ট্রিবিউটর কোম্পানির কাছে বিক্রি করেন, যাতে মুভি যদি ভালো ব্যবসা না-ও করতে পারে, তবুও যেন প্রযোজকের টাকা উশুল হয়।
তবে কেবল এই ইনকাম দিয়েই যে মুভিটি হিট কি না, তা বোঝা যায় বিষয়টি এমনও নয়, আসলে ইনকামের দিকটি যদিও বক্স অফিসের বিষয়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তবুও সিনেমার প্রচারণাও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। এটির ওপরও সিনেমার ব্যর্থতা-সফলতা অনেকাংশে নির্ভর করছে।
একটি উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি আরও পরিষ্কার করা যাক। ধরা যাক, কোনো প্রযোজকের মুভি নির্মাণ ব্যয় ছিল ৫০ কোটি, তবে মুভিটি ৮০ কোটি টাকায় তিনি এক ডিস্ট্রিবিউটর কোম্পানির কাছে বিক্রি করলেন। এতে প্রযোজক একটু সেফ জোন বেছে নিলেন। তবে সেই ডিস্ট্রিবিউটরকে সিনেমাটির ভালো ইনকামের জন্য যথারীতি প্রচারণা করতে হয়, সেই সুবাদে ধরে নেয়া যাক এতে খরচ পড়ছে ১০ কোটি টাকা। তাহলে ডিস্ট্রিবিউটরদের খরচ দাঁড়াচ্ছে সবচেয়ে বেশি। তাহলে ইনকাম করতে হলে, ব্যয় করা অর্থ উশুল করতে হলে, তাদের দরকার বিনিয়োগের বেশি পরিমাণ অর্থ।
তাহলে এখানে আবার যেই প্রশ্ন আসতে পারে, তাহলে ব্লকবাস্টার, সেমিহিট বা এভারেজ এসব আবার কী করে বের করে। যখন ডিস্ট্রিবিউটরদের বিনিয়োগ করা অর্থের সমপরিমাণ অর্থ ফেরত আসছে না, তখন সেই ছবি ফ্লপ বলে বিবেচিত হয়।
আবার বিনিয়োগের টাকা দ্বিগুণ বা তিন গুণ হারে এলে তাকে সেমিহিট বা ব্লকবাস্টার বলে। তেমনি যদি কিছু অর্থ বিনিয়োগের আশপাশেও অর্থাৎ সমান সমান থাকে, তাহলে তাকে এভারেজ মুভি বলা হবে। যে কথাটি না বললেই নয়, কেবল বক্স অফিসে সিনেমা সফল কিংবা ব্যর্থ হওয়া, সিনেমার যোগ্যতা কখনোই বিচার করা সম্ভব নয়। তাই বক্স অফিস ধারণাটি নিয়ে নানা বিতর্কও আছে।