ট্রিপল মার্ডারের আসামি মৃত্যুদণ্ড থেকে বাঁচতে কখনও পোশাক শ্রমিক, কখনও ঝুট ব্যবসায়ী কখনো আবার বাউল শিল্পীর ছদ্মবেশে ছিলেন। পরকীয়ার জেরে গর্ভবতী স্ত্রী ও সন্তানকে হত্যাকারী মো. জাকির হোসেনকে (৪৭) এক যুগ পর গ্রেফতার করেছে র্যাব।
২০ বছর আগে মানিকগঞ্জের মেয়ে নিপা আক্তারকে বিয়ে করেন মো. জাকির হোসেন। বিয়ের পর থেকেই যৌতুকের জন্য শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতে থাকেন তিনি।
২০০৫ সালে জাকিরের বড় ভাইয়ের স্ত্রী তাহমিনার সঙ্গে পরকীয়া জড়িয়ে পড়েন। ঘটনার আগের দিন জাকিরকে তার ভাবির সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলেন স্ত্রী নিপা। পরে পরিকল্পিতভাবে গর্ভবতী স্ত্রী নিপা ও তিন বছরের সন্তানকে ঘুমের মধ্যে শ্বাসরোধে হত্যা করেন জাকির।
কান্না জড়িত কণ্ঠে নিহত নিপার মা বলেন, জাকির হোসেনের ভাবির সঙ্গে তার অবৈধ সম্পর্ক ছিল। একজন ছেলে এ ঘটনা নিপাকে ডেকে দেখিয়েছিল। সত্য ঘটনার বিচার চাইবে বলে সেই রাতেই জানাজানি হওয়ার পর আমার মেয়টাকে হত্যা করা হয়। আমার মেয়ের পেটে বাচ্চা ছিল। সেটাকেও হত্যা করা হয়। আমার মেয়েটাকে খুন করে লেপ দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছিল।
নিপার স্বজনদের দায়ের করা হত্যা মামলায় জাকির ৫ বছর কারাভোগ করেন। ২০১০ সালে জামিনে মুক্তি পেয়ে জাকির গত ১২ বছর ধরে দেশের বিভিন্ন জেলায় আত্মগোপনে থাকেন। পরকীয়ার জেরে হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত থাকার অপরাধে জাকিরকে গত বছর মানিকগঞ্জের জেলা আদালত মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন।
শুক্রবার (৫ আগস্ট) সংবাদ সম্মেলনে র্যাব -৪ এর অধিনায়ক মোজাম্মেল হক বলেন, ধূর্ত জাকির হোসেন সচরাচর মোবাইল ফোন ব্যবহার করতেন না। মাঝে মাঝে মোবাইল ব্যবহার করলেও নিজের নামে সিম নিবন্ধন করেননি। ওই হত্যাকণ্ডের সঙ্গে ৯ জন প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে তদন্তকারী কর্মকর্তা চার্জশিট দাখিল করেন। এই মামলার বিচারকার্য চলতে থাকে। এক পর্যায়ে মামলাটি মানিকগঞ্জের জেলা ও দায়রা জর্জ আদালতে স্থানান্তরিত হয়।
গত ১২ বছর আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাত থেকে বাঁচতে ঘন ঘন পেশা পরিবর্তন করতেন বলে দাবি র্যাবেন। এরমধ্যে নিজের নাম পরিচয় পালটে সাভারে দ্বিতীয় বিয়ে করেন জাকির।
র্যাব কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে আত্মগোপনে থাকাকালীন পেশা পরিবর্তনের বিষয়টি স্বীকার করেন জাকির। আত্মগোপনকালে তিনি চট্টগ্রামসহ পুরান ঢাকা এবং সাভারের বিভিন্ন এলাকায় একেক সময় একেক পেশার সঙ্গে যুক্ত হতেন। কখনো ফেরিওয়ালা, কখনো পোশাক শ্রমিক, কখনো জুট ব্যবসায়ী সবশেষে তিনি বাউল বেশে গান গেয়ে বেড়াতেন।
এক যুগ ধরে পলাতক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি জাকির হোসেনকে বৃহস্পতিবার (৪ আগস্ট) সাভার থেকে গ্রেফতার করে র্যাব- ৪। অপরাধ যত পুরনোই হোক না কেন কোনো অপরাধীই পার পাবে না বলে হুঁশিয়ার করে র্যাব।