ঢাকা, শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৯শে রমজান, ১৪৪৫ হিজরি, বিকাল ৩:২৩
বাংলা বাংলা English English

ঝিমিয়ে রয়েছে দেশে জ্বালানি তেলের শোধন সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ


দেশে ক্রমাগত জ্বালানি তেলের চাহিদা বাড়লেও শোধন সক্ষমতা বাড়ানোতে এখনো পিছিয়ে রয়েছে দেশ। চাহিদা বাড়তে থাকলেও বাড়েনি শোধনক্ষমতা। বর্তমানে দেশে জ্বালানি তেলের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ৬৫ লাখ মেট্রিক টন হলেও প্রতিবছরই চাহিদা বাড়ছে। কিন্তু রাষ্ট্রায়ত্ত একমাত্র প্রতিষ্ঠান ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের (ইআরএল) পরিশোধনের ক্ষমতা মাত্র ১৫ লাখ টন। এমন অবস্থায় সরকার ইস্টার্ন রিফাইনারির দ্বিতীয় ইউনিট করার গ্রকল্প হাতে নিলেও দীর্ঘসূত্রতায় একযুগেও শুরু করা যায়নি প্রকল্প গ্রহণের কাজ। জ¦ালানি বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, জ্বালানি তেলের শোধন সক্ষমতা বাড়াতে বিগত ২০১০ সালে ইস্টার্ন রিফাইনারি ইউনিট-২ প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা হবে ৩০ লাখ মেট্রিক টন। ফলে আগের ইউনিটের সঙ্গে যুক্ত হয়ে প্রতিষ্ঠানটির মোট শোধন ক্ষমতা ৪৫ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হবে। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও বাস্তবায়নে বেশ ধীরগতি। ফলে প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাব্য ব্যয়ও বাড়ছে। প্রথমে প্রকল্প ব্যয় ১৩ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছিল। এখন তা ১৯ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। দেশের চাহিদা বিবেচনায় যতো দ্রুত সম্ভব প্রকল্পটি বাস্তবায়ন প্রয়োজন। দেশের জ্বালানি নিরাপত্তার ক্ষেত্রে তা জরুরি। চলতি বছরের শুরুর দিকেই প্রকল্প সংক্রান্ত ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয় এবং প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়েছে। তবে একনেকে চূড়ান্ত অনুমোদন হয়নি। তবে এখনো প্রকল্পটি পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় ১৯৬৮ সালে উৎপাদন শুরু করে। প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক শোধনক্ষমতা ১৫ লাখ মেট্রিক টন। কিন্তু প্রায় দুই দশক আগেই অনেকটাই ফুরিয়ে গেছে ওই স্থাপনাটির আয়ুষ্কাল। পরিশোধন ক্ষমতা কমে ১২ লাখ টনেনেমে এসেছে। দীর্ঘ ৫৪ বছর ধরে স্থাপনাটি নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে আসছে। পুরনো হওয়ার পাশাপাশি চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় এর সংস্কার এবং নতুন একটি ইউনিট স্থাপন জরুরি। কিন্তু দীর্ঘসূত্রতায় তা আটকে রয়েছে। তবে স্থাপনাটির আয়ুষ্কাল শেষ এবং পরিশোধনক্ষমতা কমে যাওয়ার পরও প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে সক্ষমতা ধরে রাখা হয়েছে। কিন্তু দেশের জ্বালানিচাহিদা এই একমাত্র রিফাইনারি দিয়ে মেটানো সম্ভব নয়। ফলে বেশি ব্যয়ে পরিশোধিত জ্বালানি আমদানি করতে হচ্ছে।
এদিকে জ্বালানি খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, সাম্প্রতিক সময়ে ইউক্রেন-রাশিয়ার দ্বন্দ্বে অস্থিতিশীল অবস্থায় জ্বালানি তেলের বিশ্ববাজার। হু হু করে দাম বেড়েছে। কিন্তু তার মধ্যেও প্রায় অর্ধেক দামে রাশিয়ার অপরিশোধিত তেলের সুযোগ ছিল। পরিশোধন ক্ষমতা থাকায় ভারত ও চীন ওই সুবিধা গ্রহণ করছে। কিন্তু বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের চাহিদা ক্রমাগত বেড়ে চললেও পরিশোধন ক্ষমতা বাড়ানো যায়নি। শোধন সক্ষমতা বাড়াতে ইন্টার্ন রিফাইনারির দ্বিতীয় ইউনিট নির্মাণের কাজ নানান জটিলতায় আলো দেখছে না।
এ প্রসঙ্গে ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ লোকমান জানান, দ্বিতীয় ইউনিটের কাজ সম্পন্ন করা গেলে দেশের বার্ষিক জ্বালানি তেল পরিশোধন ক্ষমতা ৩০ লাখ টন বেড়ে যাবে। ওই ইউনিটে ডিজেল, অকটেন, পেট্রোল, জেট ফুয়েল, সালফার, ফার্নেস অয়েল ও বিটুমিনসহ সকল ধরনের জ¦ালানি পরিশোধন করা যাবে। তন্মধ্যে বাংলাদেশে ডিজেলের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। সড়কের কাজে বিটুমিনেরও বিপুল চাহিদা। ইস্টার্ন রিফাইনারির উৎপাদিত বা পরিশোধিত জ্বালানিতেল ও বিটুমিনের গুণগত মান খুবই উন্নত। সরকারী বেসরকারী সকল সেক্টরই জ্বালানির জন্য এ প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভর করে থাকে। তবেজ্বালানি শোধনাগার নির্মাণ কাজ অনেক বড় একটি প্রকল্প। এ ধরনের কাজে অনেকগুলো দিক বিবেচনায় নিতে হয়। অনেক সতর্কতাও অবলম্বন করতে হয়। তাছাড়া দু’বছর ধরে করোনা পরিস্থিতির কারণে এক ধরনের প্রতিকূলতা ছিল।

সব খবর