ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৮ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি, সন্ধ্যা ৬:৪৬
বাংলা বাংলা English English

গার্ডার দুর্ঘটনায় ১২ কারণ চিহ্নিত:
নিরাপত্তা নিশ্চিত করে প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নেওয়ার সুপারিশ কমিটির


ঢাকা, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২ : রাজধানীর উত্তরায় বিআরটি প্রকল্পের গার্ডার দুর্ঘটনার ১২ কারণ চিহ্নিত করেছে তদন্ত কমিটি। এছাড়াও চুক্তি অনুযায়ী নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করে প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নেওয়ার সুপারিশ করেছে কমিটি।
আজ রোববার বিকেলে সচিবালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী।
কমিটির বিভিন্ন সুপারিশ প্রসঙ্গে সচিব জানান, কমিটি বিভিন্ন সুপারিশ দিয়েছে। সুপারিশগুলো হলো- চুক্তি অনুযায়ী নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করে প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নেওয়া। ভারী কাজের জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পূর্বানুমতি নিতে হবে। দুর্ঘটনা থেকে শেখার হলো এই যে, পরামর্শক প্রতিষ্ঠান থেকে পরিদর্শনের অনুমোদন না করানো এই দুর্ঘটনায় একটি প্রধান অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে। রাস্তায় এ ধরনের যেকোনো ভারী কাজ যা যানবাহন চলাচলের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সংশ্লিষ্টতা থাকবে, তা অবশ্যই পরিদর্শন করে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান থেকে যথাযথভাবে অনুমোদন করে তারপর কাজ সম্পাদন করা যেতে পারে।
সুপারিশগুলোর মধ্যে আরও রয়েছে, এ ধরনের নির্মাণ কাজের স্থান পুরোপুরি যথাযথ নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় নিয়ে আসতে হবে। বেষ্টনীকে সঠিকভাবে দৃশ্যমান করার জন্য সাইন, সিগন্যাল, মার্কিং, লাইটিং, রিপ্লেকটর ব্যবহার করতে হবে। এক্ষেত্রে চলমান এমআরটি প্রকল্পের নিরাপত্তা বেষ্টনীকে উদাহরণ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।
সড়ক পরিবহন সচিব বলেন, ওই দিনের দুর্ঘটনার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিজিজিসি দায়ী। তাদের অবহেলার কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে। তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইপিসিএম ২০২২ সালের ১১ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ৩৪টি চিঠি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে পাঠায় জানিয়ে আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, শুধু চিঠি পাঠানো নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য যথেষ্ট ছিল না। নিরাপত্তার জন্য প্রকল্প এলাকায় পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের নিয়মিত পরিদর্শন ও তদারকি রাখা প্রয়োজন ছিল।
কী ধরনের শাস্তি হতে পারে জানতে চাইলে সচিব বলেন, তদন্ত কমিটি নির্দিষ্ট করে শাস্তির সুপারিশ করে না। আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী তাদের শাস্তি হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘নো সেফটি নো ওয়ার্ক’ এই নীতিতে আমরা এগোচ্ছি।
নথিপত্র পর্যালোচনা এবং সাক্ষীদের সাক্ষ্য নিয়ে তদন্ত কমিটির চিহ্নিত ১২ টি কারণ হচ্ছে- ১. পূর্বানুমতি ছাড়া জাতীয় শোক দিবসে সরকারি ছুটির দিনে কাজ করা হয়েছিল। ওই দিন কাজ করার অনুমতি ছিল না।
২. প্রথমবারের মতো দিনের বেলায় গার্ডার স্থানান্তর করা হয়। দিনের বেলায় সেদিনই প্রথম কাজ করে। অথচ দিনের বেলা কাজ করার অনুমতি নেই। রাত ৮টার পর কাজ শুরুর কথা।
৩.ক্রেনটি সহকারী অপারেটর/হেলপার চালাচ্ছিলেন।
৪. লাইসেন্স না থাকা।
৫. দুর্ঘটনার সময় ক্রেনের জায়গা ছিল অসমতল।
৬. ক্রেনটির ডিজিটাল মনিটর ছিল না। ডিজিটাল মনিটর থাকলে স্ক্রিনে দেখা যেত।
৭. কাজের পূর্বানুমতি ছিল না।
৮. সুনির্দিষ্ট ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা ছিল না। ভারী কাজ করার সময় ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট কাজে কেউ ছিল না।
৯. ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট কর্মীদের যোগ্যতা না থাকা।
১০. যারা কাজ করতে এসেছিলেন তাদের সেফটি ইঞ্জিনিয়ার যোগ্যতা না থাকা।
১১. জরুরি ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা ছিল না।
১২. ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানে কর্মরতাদের নিয়োগ অনুমোদিত ছিল না।
গত ১৫ আগস্ট বিকেলে উত্তরায় বিআরটি প্রকল্পের একটি বক্সগার্ডার ট্রেইলারে তোলার সময় ভারসাম্য হারিয়ে চলমান একটি প্রাইভেট কারের ওপর পড়ে। এতে প্রাইভেট কারের ভেতরেই মৃত্যু হয় পাঁচজনের। দুজনকে উদ্ধার করে পাঠানো হয় হাসপাতালে। হাতহতরা সবাই একই পরিবারের সদস্য।

সব খবর