ঢাকা, শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৯শে রমজান, ১৪৪৫ হিজরি, রাত ৪:১৬
বাংলা বাংলা English English

শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার প্রবণতা, পর্যাপ্ত কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে


দেশে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহননের প্রবণতা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। চলতি বছরের আট মাসের (জানুয়ারি থেকে আগস্ট) তথ্য বলছে, দেশে প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ৪৫ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করছেন। এরমধ্যে প্রেমঘটিত কারণে আত্মহত্যার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা বেশি আত্মহত্যা করছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে সর্বোচ্চ আত্মহত্যার ঘটনা ঢাকা বিভাগে আর সবচেয়ে কম সিলেট বিভাগে। আঁচল ফাউন্ডেশনের সমীক্ষায় এ তথ্য উঠে এসেছে। দেশের প্রায় দেড়শো জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকা এবং অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে এ সমীক্ষা তৈরি করা হয়েছে। সমীক্ষার তথ্য অনুসারে, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট মাসের মধ্যে ৩৬৪ জন শিক্ষার্থী আত্মহননের পথ বেছে নেন। এরমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, স্কুল, মাদ্রাসা, নার্সিং প্রভৃতি বিভিন্ন স্তরের শিক্ষার্থী রয়েছেন। তাদের মধ্যে ১৯৪ জনই স্কুল শিক্ষার্থী। এ তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন কলেজ শিক্ষার্থীরা, যাদের মধ্যে গত আট মাসে আত্মহত্যা করেছেন ৭৬ জন। এসময়ে ৫০ জন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী আর ৪৪ জন মাদ্রাসা শিক্ষার্থী আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। সমীক্ষায় বলা হয়, আত্মহত্যাকারী ৫০ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর মধ্যে ছেলে ৬০ শতাংশ এবং মেয়ে শিক্ষার্থী ৪০ শতাংশ, কলেজপড়ুয়া ৭৬ জনের মধ্যে ৪৬ দশমিক ০৫ শতাংশ ছেড়ে এবং ৫৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ মেয়ে শিক্ষার্থী, সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ ১৯৪ জন স্কুলগামী শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩২ দশমিক ৯৯ শতাংশ ছেড়ে এবং ৬৭ দশমিক ০১ শতাংশ মেয়ে শিক্ষার্থী এবং ৪৪ জন মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩৯ দশমিক ২৯ শতাংশ ছেলে এবং ৬০ দশমিক ৭১ শতাংশ মেয়ে শিক্ষার্থী রয়েছেন। সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, দেশে তরুণদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। শিক্ষাজীবন শেষ করার পর চাকরি না পাওয়া, জীবনের প্রতি হতাশা, প্রেমে ব্যর্থতা, নারীদের ক্ষেত্রে ধর্ষণের শিকার হওয়ায় সামাজিক লজ্জা, বিয়ের পর যৌতুকের টাকার জোগান দিতে না পারা, সামাজিক নিরাপত্তার অভাব, চরম দারিদ্র্য – এরকম নানা বিষয়কে কেন্দ্র করে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে। ডিপ্রেশন বা মানসিক চাপের কারণেই কি আত্মহত্যা বাড়ছে? কেন ডিপ্রেশনে ভোগে মানুষ? ডিপ্রেশন হচ্ছে সেই রোগ যেটি মূলত চাওয়া-পাওয়ার পার্থক্যের কারণে সৃষ্টি হয়। এটি অনেকটা সামাজিক আর পারিবারিকভাবে সৃষ্ট। দেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে বাবা-মায়েরাও সন্তানদের মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে তেমন সচেতন থাকেন না। সন্তানদের মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি আমাদের দেশে আসলে কখনোই গুরুত্ব দেয়া হয় না। এটা একটা বড় সমস্যা। এ বিষয়ে সবারই সচেতন হওয়া দরকার। মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে ভাবতে হবে এবং আত্মহত্যা থেকে মানুষকে দূরে রাখার জন্য স্কুল-কলেজসহ শিক্ষার প্রতিটি স্তরে পর্যাপ্ত কাউন্সেলিং ও প্রচারণার ব্যবস্থা করতে হবে।

সব খবর