চলমান ২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষায় কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারীতে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় পূর্বের চারটি পরীক্ষার সাথে আরো নতুন করে দুটি পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা সম্বলিত বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে দিনাজপুর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ। উক্ত প্রশ্নপত্র বাতিল করা হলেও যথাসময়ে উক্ত পরীক্ষার জন্য প্রশ্নপত্র সরবরাহের কথাও উক্ত বিজ্ঞপ্তিতে প্রকাশ করা হয়।
বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) দিনাজপুর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মোঃ কামরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। উক্ত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, অত্র শিক্ষা বোর্ডের অধীন চলমান এসএসসি পরীক্ষা-২০২২ এর স্থগিত কৃত ৪টি বিষয় যথাক্রমে গণিত, পদার্থ, কৃষি ও রসায়ন বিজ্ঞান এবং আরও ২টি বিষয় জীব বিজ্ঞান ও উচ্চতর গণিত সহ মোট ৬টি বিষয়ের ইতিপূর্বে সরবরাহকৃত প্রশ্নপত্র বাতিল করা হলো। যা আগামী ২৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে উক্ত বাতিলকৃত প্রশ্নপত্র সমূহ ট্রেজারি অফিস সমূহে কঠোর নিরাপত্তার সাথে আলাদা করে পৃথক ট্রাঙ্কে সংরক্ষণের জন্য অনুরোধ করা হলো। উল্লেখ্য যে, যথাসময়ে উক্ত বিষয় সমূহের নতুন প্রশ্নপত্র সরবরাহ করা হবে।
উল্লেখ্য গত মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলায় নেহাল উদ্দিন পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষা চলাকালীন প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি গণমাধ্যম কর্মীদের মাধ্যমে অবগত হয়ে প্রশাসন পদক্ষেপ নেয়। ঐদিন এ অভিযোগে উক্ত পরীক্ষা কেন্দ্রের কেন্দ্র সচিব সহ তিনজনকে আটক করা হয়। একই দিন দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান সহ সংশ্লিষ্ট সকল উর্দ্ধতন কর্মকর্তাগণ ভুরুঙ্গামারি উপজেলায় গিয়ে বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত যাচাই বাছাই করে পরের দিন বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) চারটি পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা দেয়। ঐদিন সংশ্লিষ্ট আরও তিনজনকে আটক করা হয়। পরের দিন বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) উক্ত চারটি পরীক্ষার পরবর্তী অনুষ্ঠিতব্য তারিখ সম্বলিত বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। তাতে ২২ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়ার পরিবর্তে গণিত(আবশ্যিক) পরীক্ষা ১০ই অক্টোবর, কৃষি শিক্ষা ২৫ সেপ্টেম্বর এর পরিবর্তে ১১ অক্টোবর, পদার্থবিজ্ঞান ২৪ সেপ্টেম্বর এর পরিবর্তে ১২ অক্টোবর এবং রসায়ন বিজ্ঞান পরীক্ষা ২৬ সেপ্টেম্বর এর পরিবর্তে ১৩ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে। একই দিন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক মোঃ ফারাজ উদ্দিন তালুকদারকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি প্রেরণ করে তদন্ত শুরু করে এবং একই দিন সংশ্লিষ্ট উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্তের নোটিশ জারি করা হয়।
এ নিয়ে এখন পর্যন্ত প্রশ্নপত্র ফাঁসের মামলায় ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্র সচিবসহ মোট ৬ জনকে আটক করেছে পুলিশ। তারা হলেন, পরীক্ষার কেন্দ্র সচিব ও উক্ত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমান, ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক আমিনুর রহমান রাসেল, ইসলাম শিক্ষার শিক্ষক জোবায়ের হোসাইন, বিদ্যালয়ের বাংলা বিষয়ের শিক্ষক সোহেল আল মামুন, পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক হামিদুল ইসলাম এবং অফিস সহায়ক সুজন মিয়া। এজাহার নামীয় অপর আসামি অফিস সহকারী আবু হানিফ পলাতক রয়েছে।
এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ড ও প্রশাসন কর্তৃপক্ষ তদন্তপূর্বক দোষীদের যথোপযুক্ত শাস্তি প্রদানের কথা উল্লেখ করেছেন।
এ ঘটনার পর বৃহস্পতিবার শিক্ষার্থীরা কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে এ ঘটনার প্রতিবাদ করে এবং অভিভাবকগণ হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এদের যদি উপযুক্ত শাস্তি ও বিচার করা না হয় তাহলে এরূপ ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে এবং আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে।