নদীমাতৃক বাংলাদেশের নদীগুলো এখন দখল ও দূষণে আক্রান্ত। সাধারণ মানুষ থেকে প্রভাবশালী মহল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সবাই নদী দখলে জড়িত। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেগুলো উদ্ধারে ব্যবস্থা নিলেও শেষ পর্যন্ত আবারো তা দখলদারদের কবলে চলে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে ‘নদীর অধিকার ’ প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে ১৫ সেপ্টেম্বর বিশ^ নদী দিবস পালিত হয়েছে। নদী উদ্ধারের কথা নিয়ে সবাই সোচ্চার হলেও এতে তেমন সাফল্য আসে নি। নদী দখল মুক্ত করা একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া হলেও করোনার কারণে থেমে গেছে দখলমুক্ত করার অভিযান। আর এ সুযোগে দখলদাররা আবারো জেঁকে বসেছে। তা ছাড়া সাধারণ মানুষ ও নীতি নির্ধারকদের অনেকের কাছেই নদীর গুরুত্ব নেই। দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকেই নদী সংক্রান্ত আইন সমর্পকে অজ্ঞ। যারা জানেন তারা আইন প্রয়োগে আন্তরিক নন। তাছাড়া প্রভাবশালী দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ভয় পান। সংশ্লিষ্টদের আর্থিক সুবিধা দিয়ে নদী দখলের অভিযোগও রয়েছে। অন্যদিকে সারা দেশে নদী দখল মুক্ত করতে প্রশাসনের যে আর্থিক সহযোগিতা প্রয়োজন, তা যথাযথ না হওয়ায় নদী দখলমুক্ত করার অভিযান বাধা গ্রস্থ হয় বলে শোনা যায়।
২০১৮ ও ২০১৯ সালের দিকে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন ৬৪ জেলায় ৫৭ হাজার ৩৯০ অবৈধ দখলদারের তালিকা জেলায় জেলায় টানিয়ে দেওয়া হয়। সে তালিকায় সাধারণ মানুষ থেকে সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তি, ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক এমনকি সরকারি সংস্থাও রয়েছে। ২০১৯ সালের শেষ দিকে ১৮ হাজার ৫৭৯ জন বা ৩২ শতাংশ অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করা হয়। কিন্তু করোনার কারণে উচ্ছেদ বন্ধ হয়ে গেলে পরবর্তীতে এদিকে কেউ দৃষ্টি দেন নি। ফলে সারা দেশে নদীর মধ্যে বা পাড়ে বড় বড় অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে। সেগুলো আর উচ্ছেদ করা সম্ভব হয় নি। সরকারের যেসব সংস্থা, বোর্ড, প্রশাসন বা কমিটি এসব স্থাপনা উচ্ছেদের দায়িত্বে ছিলেন, তারা দায়িত্ব পালনে গড়িমসি করে সময় ক্ষেপণ করছেন। অন্যদিকে নদী উদ্ধারে নদী রক্ষা কমিশন যে সব পরামর্শ, সুপারিশ বা অনূর্ধ্ব করেছে তা এড়িয়ে যাওয়া বা অব্যাখ্যা করা হচ্ছে।
কুড়িগ্রামে ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ বুড়ি তিস্তা-নদীর মুখে সুইস গেইট নির্মাণের ফলে প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে স্থানীয় অনেকেই নদীতে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ শুরু করেন। স্থানীয় জনগণ বুড়ি তিস্তা নদীর প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে আন্দোলন করলে নদী রক্ষা কমিশনের মধ্যস্থতায় স্থানীয় জেলা প্রশাসন অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে নদী খনন করে পানি প্রবাহ ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। ওদিকে বুড়ি গঙ্গা নদীর তীরে এক হাজার একর জমির ওপর সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা ও ৪৫ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ বন্ধ করে দেওয়া হয়। মুন্সি-গঞ্জের গজারিয়ায় শীতলক্ষ্যা ও মেঘনা পয়েন্টে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা আনলি-মা বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হয়।
সারা দেশের নদী বাঁচাতে যে উদ্যোগ দেখা গেছে, তাতে সাফল্য খুবই কম।তবে আমরা মনে করি, রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও স্থানীয় প্রশাসনের আন্তরিকতা থাকলে নদী দখল পূনরোদ্ধার করা সম্ভব। নদী বাঁচলে জনগণ বাঁচবে এমন চিন্তা নিয়ে সবাইকে নদী দখল মুক্ত করতে উদ্যোগী হতে হবে। নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে হবে জীব বৈচিত্র্যের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য। তবেই নদীর অধিকার ফিরে আসবে।