ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৮ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি, রাত ৮:০০
বাংলা বাংলা English English

এলডিসি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কৃত্রিম তন্তু পোশাকে বিনিয়োগ বাড়াতে প্রণোদনা প্রদানের আহবান


ঢাকা, ৪ অক্টোবর, ২০২২ , স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণ পরবর্তী সময়ের জন্য বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতকে প্রস্তুত করার লক্ষ্যে ম্যান মেইড ফাইবার বা কৃত্রিম তন্তুভিত্তিক তৈরি পোশাকে আরও বেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা প্রয়োজন হবে।
আজ রাজধানীর এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এক কর্মশালায় সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা এ কথা বলেন। এমতাবস্থায় ম্যান মেইড ফাইবার বা কৃত্রিম তন্তুভিত্তিক তৈরি পোশাকে আরও বেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় নীতিগত প্রণোদনা প্রদানের আহবান জানান তাঁরা।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সাপোর্ট টু সাস্টেইনেবল গ্র্যাজুয়েশন প্রকল্প (এসএসজিপি) ও বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) যৌথভাবে ‘ ম্যান মেইড ফাইবার ফর মোভিং আপ দ্য ভ্যালু চেইন অব আরএমজি ইন দ্য কনটেক্সট অব এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন’ শীর্ষক কর্মশালার আয়োজন করে।
কর্মশালার প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নূর মো. মাহবুবুল হক ওবিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান। কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন ইআরডি সচিব শরিফা খান।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প সাম্প্রতিক দশকগুলোতে বিশ্ব বাজারে একটি শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। যার ফলে বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। তবে উল্লেখ্য যে, উত্তরণের পর বাংলাদেশ ক্রমান্বয়ে এলডিসি হিসেবে প্রাপ্ত বিভিন্ন সুযোগ সুবিধাসমূহ যেমন শুল্ক ও কোটামুক্ত বাণিজ্য সুবিধা হারাবে। এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়তে পারে তৈরি পোশাক শিল্পে।
একই সাথে উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বব্যাপী তৈরি পোশাকের বাজারে কটন বা প্রাকৃতিক তন্তুর বদলে ম্যান মেইড ফাইবার বা কৃত্রিম তন্তুর পোশাকের চাহিদা উত্তরোত্তরভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশ হতে রপ্তানিকৃত তৈরি পোশাকের সিংহভাগই হচ্ছে কটন বা প্রাকৃতিক তন্তুভিত্তিক।
এমতাবস্থায় বিশেষজ্ঞগণ মনে করেন কটনের বদলে ম্যান মেইড ফাইবারের দিকে ক্রমশ ঝুঁকতে পারলে তা বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের চাহিদা বৃদ্ধিতে ও বাজার সম্প্রসারণে সহায়তা করবে। একই সাথে উত্তরণ পরবর্তী সময়ে রুলস অব অরিজিএন এর কঠোরতর মানদন্ড পূরণে ম্যান মেইড ফাইবার ভিত্তিক পোশাক পণ্য অধিকতর সহায়তা করবে বলে ধারণা করা হয়ে থাকে।
এমতাবস্থায় স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে ম্যান মেইড ফাইবারভিত্তিক পোশাকপণ্যের উত্তরোত্তর প্রসারের উদ্দেশে কি পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায় সেই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলের মধ্যে প্রয়োজনীয় মত বিনিময় ও পর্যালোচনার লক্ষ্যে এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়।
কর্মশালায় পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ম্যান মেইড ফাইবার ব্যবহার করা হলে তৈরি পোশাক খাতে বহুমুখীকরণ আরও তরান্বিত হবে। একই সাথে ম্যান মেইড ফাইবারভিত্তিক তন্তু ও কাপড়ের শিল্প গড়ে তোলা সম্ভব হলে আমাদের ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ আরও শক্তিশালী হবে।
ইআরডি সচিব শরিফা খান বলেন, বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকপণ্যের অবস্থান আরও শক্তিশালীকরণের জন্য প্রাকৃতিক তন্তুর তৈরি পোশাকের প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি ম্যান মেইড ফাইবারভিত্তিক পোশাকের বাজারের সম্ভাবনাকে অধিকতরভাবে কাজে লাগাতে হবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নূর মো. মাহবুবুল হক তাঁর বক্তৃতায় টেক্সটাইল খাতে প্রযুক্তিগত আধুনিকায়নের উপর জোর দেন।
বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান উত্তরণ পরবর্তী সময়ের জন্য প্রস্তুতির লক্ষ্যে তৈরি পোশাক খাতের অভ্যন্তরীণ সক্ষমতা বৃদ্ধির উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। এছাড়া তিনি সংশ্লিষ্ট আমদানি রপ্তানি প্রক্রিয়া সহজীকরণ ও লজিস্টিক খাতে আরও উন্নতির উপর জোরারোপ করেন।
কর্মশালার মূল বিষয়বস্তুর উপর উপস্থাপনা প্রদান করেন গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিসার্চ এন্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র‌্যাপিড) চেয়ারম্যান ড. এম এ রাজ্জাক। এছাড়া বিষয়ে উপস্থাপনা প্রদান করেন বি জি এম ই এ পরিচালক আসিফ আশরাফ।
কর্মশালার প্যানেল আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক কাজী রফিকুল হাসান, বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম ও বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) পরিচালক সৈয়দ নুরুল ইসলাম।
কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইআরডির অতিরিক্ত সচিব ও এসএসজিপির প্রকল্প পরিচালক ফরিদ আজিজ।
সরকারি ও বেসরকারি খাতের সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিবৃন্দ এবং বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিবৃন্দ কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন।

সব খবর