দেখে মনে হচ্ছে ধানগুলো বুঝি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে! ধানের এমন বর্ণ স্থানীয়দের মাঝে তৈরি করেছে কৌতূহল। বস্তুত এটা উচ্চ ফলনশীল ধানের জাত। দিনাজপুরের হিলিতে প্রথমবারের মতো আবাদ হচ্ছে ক্যানসার প্রতিরোধী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পুষ্টি সমৃদ্ধ উচ্চ ফলনশীল ধান। ফিলিপাইনের ব্ল্যাক রাইস, চায়না ব্ল্যাক এবং বেগুনি জিঙ্ক জাতের এসব ধান চাষ করেছেন শামীম নামের এক কৃষক। তার এসব প্রজাতির ধান চাষ দেখে আগ্রহী হচ্ছেন অন্য অনেক কৃষক। এ ধরণের ধান চাষে তেমন কোনো রোগবালাই না থাকায় ভালো ফলনের আশা কৃষক শামীমের। উচ্চ ফলনশীল এসব ধান আবাদ বৃদ্ধি করতে সব ধরণের সহযোগিতার আশ্বাস উপজেলা কৃষি বিভাগের।
হিলি থেকে ৫ কিলোমিটার পূর্ব দিকে বোয়ালদাড় গ্রামের মাঠে জুড়ে চোখে পড়বে ভিন্ন এসব ধানের সৌন্দর্য। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে সবুজের সমারোহ, তার মাঝে খণ্ড খণ্ড জমিতে কালো ও বেগুনী জাতের ধান বাড়িয়েছে বাড়তি শোভা। ধান তার নিজের শোভা দিয়ে স্থানীয়দের দৃষ্টি জুড়ানোর পাশাপাশি আগ্রহী করে তুলছে অন্য কৃষকদের।
বোয়ারদাড় গ্রামে ধানক্ষেতে দেখা মিললো কৃষক শামীমের। এলাকায় প্রথমবারের মতো এমন নতুন জাতের উচ্চফলনশীল ধান আবাদ করেছেন তিনি। এ নিয়েই তার ব্যস্ত সময় কাটছে।
এমন জাতের ধান চাষের বিষয়ে জানতে চাইলে শামীম বলেন, কৃষক পরিবারের সন্তান আমি। ব্যাংক ও মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি করেছি টানা ১৮ বছর। তবে কর্মজীবনের শুরু থেকেই কৃষিকাজ পিছু ছাড়েনি। সে টানেই চাকরি ছেড়ে গ্রামে এসে কৃষি কাজ শুরু করা।
প্রথমদিকে মিশ্র ফলের বাগান করে সফলতা পাওয়ার পরে এবারই প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে জমিতে চাষ শুরু করেছেন উচ্চ ফলনশীল ক্যানসার প্রতিরোধী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ চায়না ও ফিলিপাইনের ব্ল্যাক রাইস, জিংক বা বেগুনী জাতের ধান। বিদেশী এসব জাতের ধানের বীজ তিনি সংগ্রহ করেছেন নাটোরের ইমরান, ঢাকার মোক্তাদির ও পার্বতীপুরের সায়েদের কাছ থেকে।
শামীম আরও বলেন, প্রথমে শখের বসে আবাদ করা। এরইমধ্যে কিছু ধান কাটা হয়েছে তাতে ফলনও বেশ ভালো পেয়েছি। এসব ধানের বীজ সংগ্রহ করে স্থানীয় কৃষকদের মাঝে কম দামে বিক্রি করার ইচ্ছে আছে।
ধানের আবাদ সম্বন্ধে স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, প্রথমে যখন এই ধরণের ধান রোপন করা হয়েছে তখন দেখেছি ধানের রঙটা লালচে ধরণের। পরিণত ধানের বর্ণ অনেকটা এমন যে, সাধারণত ধান পুড়ে গেলে যে কালছে রঙ হয়, সে রঙ ধারণ করে। প্রথমে ভেবেছিলাম ধানগুলো হয়তো পুড়ে গেছে। তবে এখন দেখছি এ ধানের রঙটাই এমন। শুনেছি এটা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি এবং দামও নাকি অনেক বেশি। আগামীতে আমরাও লাগাবো এসব ধান।
হাকিমপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ড. মমতাজ সুলতানা বলেন, কৃষিখাতে নতুন সম্ভাবনা উন্মোচনের পাশাপাশি উন্নতজাতের এসব ধান এলাকায় ছড়িয়ে দিতেই নিজ উদ্যোগে চাষ শুরু করেছেন কৃষক শামীম। এখানে উৎপাদিত এসব ধানের বীজ দেয়া হবে স্থানীয় কৃষকদের মাঝে।