৬৩ শতাংশ জমিতে সারি সারি কুলগাছ। আকারে ছোট। বড়জোর চার থেকে পাঁচ ফুট। সারাবাগান যেন এখন সবুজ আর লাল রঙে ছেয়ে গেছে। কুলের ভারে নুয়ে পড়েছে গাছগুলো। তাই বাঁশ দিয়ে ঠেস দিয়ে রাখা হয়েছে।
পটুয়াখালী সদর উপজেলার ছোট বিঘাই ইউনিয়নের দক্ষিণ তুষখালী পেয়ারপুর গ্রামের যুবক ইদ্রিস ফরাজী আগাম থাই আপেল কুল চাষে ব্যপক সফলতা অর্জন করছেন। শুরুতেই তার আট লাখ টাকার বরই বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে প্রথম বছরেই তার সম্পূর্ণ খরচ বাদে তিন লাখ টাকার মতো লাভ হবে। সবকিছু ঠিক থাকলে পরবর্তী বছরে তার ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা লাভের সম্ভাবনা রয়েছে।
ইদ্রিস ফরাজীর বাগানের আগাম থাই আপেল কুল সুস্বাদু আর মিষ্টি হওয়ায় এলাকায় ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বাগান থেকেই প্রতি কেজি ১৮০ টাকা দরে বরই বিক্রি করছেন তিনি। তার দেখাদেখি এলাকার অনেকেই থাই আপেল কুল চাষের দিকে ঝুঁকছেন। তার বাগান থেকে প্রতিদিন ৪০-৫০ কেজি বরই সংগ্রহ করা হয়। বাগান থেকেই এসব বরই ক্রয় করছেন পাইকাররা।
থাই আপেল কুল দেখতে অনেকটা মাঝারি সাইজের আপেলের মতো। রং আপেলের মতো সবুজ ও হালকা হলুদের ওপর লাল। অনেকটা বাউ কুলের মতো। এর আগে আপেল কুল চাষ হলেও নতুন জাতের থাই আপেল কুলের চাষ এই অঞ্চলে এটাই প্রথম। প্রচলিত আপেল কুল ও বাউ কুলের থেকে আকারে বেশ বড় এই থাই আপেল কুল।
ইদ্রিস ফরাজী জানান, মাগুরা থেকে প্রতি কলম ১০০ টাকা হিসেবে মোট ৪০০টি থাই আপেল কুলের কলম কিনে আনেন। প্রায় এক ফুট লম্বা আকারের কলম লাগানো ৯ মাসের মধ্যে প্রতিটি গাছে ফল আসতে শুরু করে। প্রতিটি গাছে এখন প্রায় ৩০ থেকে ৪০ কেজির মতো ফল রয়েছে। এছাড়াও বরই বিক্রির পাশাপাশি তিনি এই গাছ থেকে কলম তৈরি করে সেগুলো বিক্রি করেও অতিরিক্ত উপার্জন করছেন।
বাগানের মালিক ইদ্রিস ফরাজী বলেন, আমার এক ভায়রার জামাতার পরামর্শে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে এই বাগান শুরু করি। এখানে প্রায় পাঁচ লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। আশা করছি এ বছর আবহাওয়া যদি ভালো থাকে তাহলে কমপক্ষে ৮ লাখ টাকার থাই আপেল কুল বিক্রি করতে পারব। এই বরই খুবই সুস্বাদু ও মিষ্টি। দেখতে একদম আপেলের মতো। আমি যখন এই বরই চাষ শুরু করি, তখন একটি ছত্রাক জাতীয় পোকা আমার বরই গাছের পাতা নষ্ট করে ফেলে। তারপর আমি যখন ওষুধ দেই। আস্তে আস্তে সেই পাতা ঠিক হয়ে যায়। এরপর ফুল আসে। ডিসেম্বরের শুরুতে ফল আসতে থাকে।
তিনি আরও বলেন, এই বাগানের পেছনে যা খরচ হওয়ার হয়ে গেছে। আগামী বছর যে বরই বিক্রি করে যে টাকা পাব, তার পুরোই আমার লাভ থাকবে। তারপরও এ বছর তিন লাখ টাকার মতো লাভ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও এই বরই গাছ থেকে কলম তৈরি করে সেগুলো স্থানীয় ভাবে বিক্রি করে এলাকার মানুষদের বরই চাষের প্রতি আগ্রহ তৈরি করছি। কলম বিক্রি করেও আমার অতিরিক্ত উপার্জন হচ্ছে।
পটুয়াখালী সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. ইমরান হোসেন বলেন, ইদ্রিস ফরাজী একজন সফল বরই চাষি। আমাদের মাঠকর্মীরা সব সময় কৃষকদের পাশে রয়েছেন যে কোনো পরামর্শ এবং সহযোগিতার জন্য। আমি ইদ্রিস ফরাজির বাগান পরিদর্শন করব। তাকে যে যে পরামর্শ দেওয়া দরকার আমি দেব।