ঢাকা, শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৯শে রমজান, ১৪৪৫ হিজরি, ভোর ৫:৩৩
বাংলা বাংলা English English

স্লুইচ গেট না থাকায় মৌলভীবাজারে ব্যাহত ৭০০ হেক্টর জমির চাষাবাদ


মৌলভীবাজারের কোদালিছড়া খালের ‘দুগাঙের মুখ’ এলাকায় স্লুইচ গেট না থাকা এবং অপরিকল্পিত ক্রস বাঁধের কারণে ভরা মৌসুমেও পানি পাচ্ছেন না উপজেলার খাইঞ্জার হাওড়ের চাষিরা।

ফলে বোরো চাষের ভরমৌসুমে পানির অভাবে হাওড়ের প্রায় ৭০০ হেক্টর জমির বোরো চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয় কৃষকদের।

পানি উন্নয়ন বোর্ড-এর নির্বাহী প্রকৌশলী অভিযোগ স্বীকার করে কোদালিছড়াকে সেচ খালের আওতায় নিয়ে আসার প্রয়োজনীয় উদ্যোগের কথা জানান।

 

স্থানীয় কৃষকরা জানান, খাইঞ্জার হাওড়ের ফসলি জমিতে একসময় তিনটি ফসলের চাষ হতো। অগ্রহায়ণে আমন ধান ঘরে ওঠানোর পরপরই কোদালিছড়া খালের পানি ব্যবহার করে চাষিরা একই জমিতে বোরো ধান চাষ করতেন। বোরো চাষের সঙ্গে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার মোস্তফাপুর ইউনিয়নের ছয়টি গ্রামের প্রায় চার হাজার চাষি জড়িত বলেও জানান তারা।

তারা আরও জানান, শুষ্ক মৌসুমে সেচ সুবিধা নিশ্চিত করতে ২০১৩ সালে এ খালের ভাটির দিকে আজমেরুগঞ্জ নামক স্থানে একটি স্লুইচ গেট স্থাপন করা হয়। অপরিকল্পিত ও আকারে ছোট (সংকীর্ণ) হওয়ায় এ স্লুইচ গেট দিয়ে পানি না আসায় খাইঞ্জার হাওড়ে আগের মতো আউশ, আমন ও বোরো কোনো ফসলই চাষ করা যাচ্ছে না। শুধু তাই নয়, স্লুইচ গেটের কারণে বর্ষা মৌসুমে পানি আটকে এ অঞ্চলে স্থায়ী জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে বলেও অভিযোগ তাদের।

মোস্তফাপুর ইউনিয়নের গয়ঘর গ্রামের চাষি শওকত জানান, এ হাওড়ে তার প্রায় ২০ কিয়ার (হেক্টর) জমি রয়েছে। চার বছর ধরে তিনি পানির অভাবে বোরো চাষ করতে পারছে না জানিয়ে বলেন, আমনের সময় কিছু চাষ হলেও জলাবদ্ধতা তা নষ্ট করে দেয়। একই অবস্থার কথা বলেন চাষি আমির।

 

ভূজবল গ্রামের কালাম ও আজমেরু গ্রামের সাবুল জানান, এই স্লুইচ গেটের কারণেই তাদের সবকিছু তছনছ হয়ে যাচ্ছে।

তবে চাষিরা জানান, চার বছর আগে তারা কোদালিছড়া খালের বিভিন্ন অংশে ক্রসবাঁধ দিয়ে পানি আটকে যে যার মতো বোরো চাষ করে আসছিলেন। এখন এ কোদালিছড়া খালে কোনো ক্রসবাঁধ দেয়া যাচ্ছে না। কারণ, কোদালিছড়া খাল পুনর্খনন করে জেলা শহরের জলাবদ্ধতা নিরসন করা হয়েছে। এতে খাইঞ্জার হাওড়ে সেচের পানির অভাবে ৭০০ হেক্টর জমির বোরো চাষাবাদ পুরোটাই ব্যাহত হয়ে পড়েছে।

’দুগাঙের মুখ’ এলাকার কোদালিছড়া খালের উজানে কোনো এক স্থানে স্লুইচ গেট স্থাপনের দাবি জানিয়ে কৃষকরা বলেন, এতে সঠিকভাবে পানি নিয়ন্ত্রণে এ খালের ভাটি ও উজানের দিকে সহজে বোরো চাষবাদ সম্ভব হবে।

এরই মধ্যে প্রশাসনের মৌখিক অনুমতিতে ’দুগাঙের মুখ’ এলাকায় অস্থায়ী ক্রসবাঁধ দিয়েছেন চাষিরা। এতে পানি পেয়ে বেশ কিছু জমিতে বোরো চাষের প্রস্তুতি চলছে। তবে শ্রীমঙ্গল গ্রামের একাধিক চাষি ও স্থাপিত স্লুইচ গেটের ভাটি এলাকার লোকজনের অভিযোগ, কোদালিছড়ার উজানে বাঁধ দেয়ায় বেশ কয়েকটি গ্রামের চাষিরা পানি পাচ্ছেন না। এসব চাষি ক্রসবাঁধগুলো অপসারণের দাবি জানিয়েছেন।

 

সেচ সংকটের বিষয়টি নিয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক সামছুদ্দিন আহমদ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন।

হাওড়ের সেচ সংকট সমাধানে পানি উন্নয়ন বোর্ড-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাবেদ ইকবাল জানান, কোদালিছড়াকে সেচ খালের আওতায় নিয়ে আসার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়িত হলে পানির সমস্যা কেঁটে যাবে বলে জানান তিনি।

কৃষি বিভাগের দেয়া তথ্যমতে, মৌলভীবাজার সদর উপজেলার এ খাইঞ্জার হাওড়ে দেড় হাজার হেক্টর জমিতে আউশ, আমন ও বোরো ধানের চাষাবাদ হয়।

 

সব খবর