ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৮ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি, দুপুর ২:৩০
বাংলা বাংলা English English

ছোট হয়ে যাচ্ছে কর্ণফুলী, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে হবে


ক্রমশই ছোট হয়ে আসছে নদীর আকার। নদীর প্রসস্থতা ও গভীরতা কমে গেছে একেবারেই। কর্ণফুলী নদীর দুই পারের আশপাশে প্রায় তিন শতাধিক শিল্পণ্ডকারখানা, বাণিজ্যিক ও গৃহস্থালি বর্জ্য এবং প্লাস্টিক পণ্যের ভাগার। প্রতিনিয়ত বর্জ্য পরে দূষিত হয়ে যাচ্ছে নদীর পানি। অবিরতই দখল হচ্ছে নদীর দুই পাড়। এভাবে দখল হতে থাকলে এটি একদিন হারিয়ে যাওয়া নদীর তালিকায় পড়ে যাবে। ধ্বংস হয়ে যাবে নদীর জীব-বৈচিত্র্য ও মৎস্য সম্পদ। চট্টগ্রাম মহানগর এলাকায় দৈনিক ৩ হাজার টন বর্জ্য উৎপাদন হয়। এদের মধ্যে প্লাস্টিক পলিথিন বর্জ্য ২৪৯ টন। কিন্তু এসব প্লাস্টিক-পলিথিন বর্জ্যরে মধ্যে সংগ্রহ হয় ১০৯ টন এবং অ-সংগ্রহীত থেকে যায় ১৪০ টন। এই অ-সংগ্রহীত প্লাস্টিক-পলিথিন বর্জ্যরে অধিকাংশই খাল হয়ে পড়ে কর্ণফুলী নদীতে। এসব কারণেই নদীতে প্লাস্টিক ও পলিথিনের স্তর পরে ভরে যাচ্ছে। অনুকণা ছড়িয়ে পড়ছে মানুষ, মাছসহ বিভিন্ন প্রাণীর দেহে। কর্ণফুলী নদীতে ৮৫টি মার্চেন্ট জাহাজ, ৪০৫টি কোস্টার জাহাজ, ২৬৪ টি মাছ ধরার ট্রলার, ৯টি টাগ নৌকাসহ সাম্পান, ছোট ছোট নৌকা, বিদেশি জাহাজ ও ট্রলার চলাচল করে। এসব নৌযানের ময়লা, পোড়া তেল সরাসরি নদীতে ফেলা হয়। এ ছাড়া অসংখ্য নৌযান বঙ্গোপসাগরের মোহনা থেকে ঘাটে নোঙর করে রাখায় নদীর স্বাভাবিক নব্যতা, ডলফিনসহ জলজ প্রাণীদের স্বাভাবিক বিচরণ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কর্ণফুলী নদীর মোহনা থেকে কাপ্তাই বাঁধ পর্যন্ত দুই পারে মোট ৫২৮ প্রজাতির উদ্ভিদ শনাক্ত করা হয়। এর মধ্যে ৮১ টি বিপন্ন প্রজাতির। নদী দখল-দূষণ বন্ধ না হলে ভবিষ্যতে ৮১টি প্রজাতির বিপন্ন উদ্ভিদ হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর প্রভাবে বনাঞ্চলও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নদীর দুই তীরের গাছপালাও ব্যাপক হারে ধ্বংস হচ্ছে। বেসরকারি সংস্থা ইফেকটিভ ক্রিয়েশন অন হিউম্যান ওপেইনিয়নের এক জরিপ থেকে এসব তথ্য পাওয়া যায়। ২০১৪ সালে শাহ আমানত সেতুর নিচে কর্ণফুলী নদীর প্রবহমান ধারায় প্রস্থ ছিল ৮৬৬ মিটার। এখন তা ভাটার সময় ৪১০ মিটার ও জোয়ারের সময় ৫১০ মিটার। রাজাখালী খালের মুখে প্রশস্ততা ৪৬১ মিটার, আগে ছিল ৮৯৪ মিটার। এছাড়াও বিভিন্ন মুখে নদীর প্রশস্ততা অনেকটাই কমে গেছে। নদীর পারের অবৈধ দখলের কারণে দিন দিন কর্ণফুলীর প্রশস্ততা কমেছে। এসব অবৈধ স্থাপনাকে উচ্ছেদ করতে হবে। না হলে একসময় নদীর অস্তিত্ত্বই হারিয়ে যাবে। নদী রক্ষা করতে হলে অবৈধ স্থাপনার তালিকা তৈরি করে দ্রুত উচ্ছেদের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি সরকারের উচ্চ পর্যায়ে এসব বিষয়ে আমলে নিতে হবে। তাহলে আবার ফিরে আসবে নদীর নাব্যতা। টিকে থাকবে নদীর জীব-বৈচিত্র্য ও মৎস্য সম্পদ।

সব খবর