ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৮ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি, সন্ধ্যা ৬:০০
বাংলা বাংলা English English

বিপর্যস্ত সুন্দরবনকে রক্ষার দাবি


বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা সুন্দরবন বাংলাদেশের জন্য প্রকৃতির উপহারস্বরূপ। যা বিশ্বের প্রাকৃতিক বিষয়াবলীর অন্যতম। সুন্দরবন শুধু প্রাণ বৈচিত্র্যের আধারই নয়, বাংলাদেশের প্রাকৃতিক ঢালও বটে। নানা প্রজাতির বনজ বৃক্ষের সমারোহে সাজানো নয়নাভিরাম সুন্দরবন দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উপকূল বাসীকে বারবার প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে প্রাচীর হয়ে রক্ষা করে যাচ্ছে। কিন্তু সেই মানুষই বন ধ্বংস করছে নিজেদের স্বার্থে। শুধু সুন্দরবন নয়, সারা দেশেই বন-বাদাঁড় উজাড় করা হচ্ছে। বনের জমি দখল করা হচ্ছে, বন্যপ্রাণী পাঁচার করে প্রাণবৈচিত্র্য নষ্ট করা হচ্ছে, অবৈধ শিকার চলছে, অবিচক্ষণতাপ্রসূত উন্নয়ন প্রকল্পের ক্ষতিকর প্রভাবও পড়ছে। এসব কর্মকান্ডের সবচেয়ে বেশি অপপ্রভাব পড়ছে সুন্দরবনের ওপর। সাতক্ষীরা, খুলনা আর বাগেরহাট জেলার উপকূলে বসবাসরত লাখ লাখ মানুষকে প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করতে মায়ের ভূমিকা পালন করছে সুন্দরবন। সমুদ্র থেকে উঠে আসা প্রাকৃতিক দুর্যোগের আঘাত প্রথমে বুক পেতে প্রতিহত করে সুন্দরবন। সুন্দরবন না থাকলে উপকূলের এই জনপদগুলো অনেক আগেই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হতো। তবে দেশের প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষার এই অন্যতম রক্ষাকবচ যেন দিনে দিনে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। বিশেষ করে নির্বিচারে গাছ নিধন, বন্যপ্রাণী হত্যা, জলাশয়ে বিষ প্রয়োগ করে মাছ ধরাসহ নানাভাবে আজ বিপর্যস্ত সুন্দরবন। সুন্দরবন সুরক্ষার জন্য অনেক বছর ধরে দাবি জানানো হলেও। কোনোভাবেই যেন সুন্দরবনকে রক্ষা করা যাচ্ছে না। বিশেষ করে উপকূলবর্তী অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ জীবন-জীবিকার জন্য সরাসরি সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল। কখনো তারা সুন্দরবনের মধ্যে মৌয়াল হয়ে মধু সংগ্রহ করতে যায়, কখনো জেলে হয়ে মাছ ধরতে যায় আবার কখনো কাঠুরিয়া হয়ে কাঠ কেটে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। কিন্তু আমাদের লোভী মানসিকতার কারণে আমরা নিজেরাই আমাদের কর্মসংস্থানের জায়গাগুলোকে ধ্বংস করে ফেলছি। প্রতি বছর একটি নির্দিষ্ট সময়ে বনে প্রবেশের অনুমতি দেয় বন বিভাগ। বিভিন্ন শ্রেণিতে এসব পাশ নিয়ে তারা সুন্দরবনে প্রবেশ করে। তবে তারা বৈধ অনুমতি নিয়ে বনে প্রবেশ করলেও ভেতরে ঢুকে অবৈধ কার্যক্রমে লিপ্ত হচ্ছে। বেশির ভাগ বনজীবীরা মধু সংগ্রহ ও মাছ ধরার পাশ নিলেও তারা ভেতরে ঢুকে অবৈধভাবে কাঠ পাঁচার করছে। এতে দিনদিন সুন্দরবনে গাছের পরিমাণ কমছে। বর্তমানে সুন্দরবনের গাছের পরিমাণ কমে যাওয়ায় ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতি বেড়েছে কয়েক গুণ। ক্রমেই হ্রাস পাঁচ্ছে বনের পরিবেশগত মান। এ যেন রক্ষকের প্রতি ভক্ষকের আচরণ! এভাবে চলতে থাকলে এ বনাঞ্চল ঘূর্ণিঝড় ও সুনামির মতো দুর্যোগের বিরুদ্ধে তার প্রতিরক্ষামূলক জৈবিক ব্যবস্থা হারিয়ে ফেলবে। এবং একই সঙ্গে উপকূলীয় মানুষ পড়বে মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে। এ কারণেই সুন্দরবন রক্ষার জন্য সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে। উপকূলীয় স্থল-ব্যবহারের সুষম পরিকল্পনা তৈরির পাশাপাশি সুন্দরবন থেকে কাঠ চুরি বন্ধ করতে হবে। জমি ও বনের ওপর নির্ভরতা হ্রাস করার জন্য স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে হবে। নাগরিক সমাজ ও ওই অঞ্চলের শিল্পণ্ডকারখানার সমন্বয়ে বিকল্প জীবিকার সুযোগ তৈরি করতে হবে। সুন্দরবন রক্ষায় যথাযথ কর্তৃপক্ষকে কঠোর আইন প্রয়োগ ও সুন্দর বনকে কেন্দ্র করে যেসব অপরাধ হয় তা প্রতিহত করতে হবে। সুন্দরবন আমাদের গর্ব। তাই এর সৌন্দর্য ও প্রকৃতি-পরিবেশ রক্ষায় উল্লিখিত পদক্ষেপগুলো যথাযথ বাস্তবায়ন করলে হয়তো সুন্দর বনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যর-পাশাপাশি বনের জীববৈচিত্র্যে রক্ষা করা সমম্ভব। এক্ষেত্রে বন রক্ষায় আমাদের নিজ দায়িত্বে সচেতন হতে হবে।

সব খবর