ঢাকা, শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি, দুপুর ১২:৩৪
বাংলা বাংলা English English

সৌরজগতের নবম গ্রহ ‘প্ল্যানেট এক্স’-এর অস্তিত্ব আছে কি?


আমাদের সৌরজগতকে বেশ ব্যস্ত এলাকাই বলা চলে। গ্রহ থেকে শুরু করে উপগ্রহ, ধুমকেতু, গ্রহাণু এবং আরও অন্যান্য গতিশীল বস্তু নিয়ে প্রতিনিয়ত ‍ছুটে চলছে আমাদের সৌরজগত। প্রতিনিয়িত আবিষ্কৃত হচ্ছে নতুন নতুন কিছু। কিন্তু এত আবিষ্কারের ভিড়ে এখনো অজানা রয়ে গেছে সৌরজগতে ‘প্ল্যানেট এক্স’ বা নবম কোনো গ্রহ রয়েছে কি-না।

১৮৪৬ সালের মধ্যেই জানা হয়ে যায় সৌরজগতে আটটি গ্রহ রয়েছে। তারপরের দেড়শ’ বছরে একাধিকবার গ্রহসদৃশ গ্রহাণু পাওয়া গেছে। প্লুটোকে নবম গ্রহের মর্যাদা দেয়া এবং তা আবার কেড়ে নেয়া নিয়েও বিতর্ক কম হয়নি। প্লুটোর নবম গ্রহের মর্যাদা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে সৌরজগরে বাইরের প্রান্তে গ্রহাণুগুলোর অদ্ভূত আচরণ বিজ্ঞানীদের কৌতুহলী করে তুলেছে। তারা ধারণা করছেন, সৌরজগতের বাইরের প্রান্তে কোথাও না কোথাও একটা গ্রহ লুকিয়ে বেড়াচ্ছে। বিজ্ঞানীর সম্ভাব্য এই গ্রহকে বলছেন প্ল্যানেট নাইন বা প্ল্যানেট এক্স।

সত্যিই নবম কোনো গ্রহ রয়েছে কি?

জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা একটি নবম গ্রহ তথা ‘প্ল্যানেট নাইন’ বা ‘প্ল্যানেট এক্স’ শনাক্ত করার চেষ্টায় শত শত ঘন্টা ব্যয় করছেন। এর একটি ভাল কারণ রয়েছে। কারণটি হলো, আমাদের সৌরজগতের যে আচরণ, তা নবম একটি গ্রহ ছাড়া অনেকটা অসম্পূর্ণ মনে হয়।

আমাদের সৌরজগতের প্রতিটি বস্তুই সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। কেউ দ্রুত এবং কেউ ধীর গতিতে চলে। কিন্তু সবাই মহাকর্ষের নিয়ম মেনে চলে। ভরবিশিষ্ট সবকিছুরই মাধ্যাকর্ষণ আছে। আমার, আপনার এবং আমাদের সবার ও সবকিছুর। কোনো বস্তু যত ভারী, তার মাধ্যাকর্ষণও তত বেশি।

একটি গ্রহের মাধ্যাকর্ষণ এত বেশি যে, এটি এর চারপাশের বস্তুগুলোকে নিজের দিকে টানে এবং তাকে কেন্দ্র করে ঘুরতে বাধ্য করে। এটাকে বলা হয়, ‘মহাকর্ষীয় টান’। পৃথিবীর মহাকর্ষীয় টানই সবকিছুকে মাটিতে আটকে রাখে। এই টান না থাকলে সবকিছু ছিটকে পড়ত পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে।

এছাড়াও, আমাদের সৌরজগতের মূলবস্তুটি হলো সূর্য। ফলে সূর্যেরই সবচেয়ে বেশি মাধ্যাকর্ষণ শক্তি রয়েছে এবং মূলত এ কারণেই গ্রহগুলো এর চারপাশে প্রদক্ষিণ করে। মহাকর্ষীয় শক্তি সম্পর্কে আমাদের বোঝাপড়ার কারণেই মূলত বিজ্ঞানীরা একটি সম্ভাব্য ‘প্ল্যানেট নাইন’-এর উপস্থিতির ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি আশাবাদী।

অপ্রত্যাশিত আচরণ

যখন আমরা পৃথিবী থেকে দূরের কোনো বস্তুর দিকে তাকাই; বিশেষ করে সৌরজগতের বাইরের প্রান্তের দিকে, তখন দেখতে পাই যে, সেখানকার বস্তু বা গ্রহানুগুলোর কক্ষপথ কিছুটা অপ্রত্যাশিত। কারণ তারা অনেকটা ডিম্বাকার কক্ষপথে থেকে সূর্যকে আবর্তন করে। একইসঙ্গে অনেকগুলো বস্তু বা গ্রহাণু দল বেধে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। যা সৌরজগতের অন্যান্য বস্তুর কক্ষপথের চেয়ে অনেকটাই আলাদা।

বিজ্ঞানীরা বিষয়টি বোঝার জন্য একটি কম্পিউটার মডেলের অবতারণা করেন। সেখান থেকে তারা দেখতে পান, যে শক্তির কারণে বস্তু বা গ্রহাণুগুলো এমন ডিম্বাকার কক্ষপথে এবং দলবেধে প্রদক্ষিণ করে তার জন্য এসবের আশপাশে পৃথিবীর চেয়ে ১০ গুণ বেশি ভরসম্পন্ন কোনো বস্তুর উপস্থিতি থাকা প্রয়োজন। আরও স্পষ্ট করে বললে, পৃথিবীর চেয়ে ১০ গুণ বেশি ভরের কোনো গ্রহের উপস্থিতির প্রয়োজন।

ফলে কম্পিউটার মডেলের যে ভবিষ্যদ্বাণী এবং মডেলটি সঠিক কি-না তা নিশ্চিতভাবে জানার একমাত্র উপায় হল প্ল্যানেট নাইন খুঁজে বের করা।

খোঁজ চলছে

সারা বিশ্বের বিজ্ঞানীরা বহু বছর ধরেই প্ল্যানেট নাইনের দৃশ্যমান প্রমাণের সন্ধানে রয়েছেন। কম্পিউটার মডেলের উপর ভিত্তি করে বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্ল্যানেট নাইন নেপচুনের তুলনায় সূর্য থেকে কমপক্ষে ২০ গুণ দূরে। বিজ্ঞানীরা গ্রহটি সূর্যের আলো প্রতিফলিত করে কি-না এবং করলে কী পরিমাণে করতে পারে সেটি জেনে গ্রহটি থেকে প্রতিফলিত সূর্যরশ্মি শনাক্ত করার চেষ্টা করছেন।

বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, যেহেতু প্ল্যানেট নাইন সূর্য থেকে অনেক দূরে তাই এটি আমাদের দৃষ্টিগোচর হওয়ার জন্য ততটা স্পষ্ট নয় এবং পৃথিবীর সেরা টেলিস্কোপের জন্যও এটিকে চিহ্নিত করা কঠিন। এছাড়া আরেকটি বিষয় হলো, বছরের যে কোনও সময় গ্রহটি সন্ধান করা যায় না। আবার বছরের যে সময়টাতে সন্ধান করা যায় সে সময়টাতে রাতে পর্যবেক্ষণ করা যায়। বিশেষত এমন রাতে যে সময় আকাশে চাঁদ থাকে না।

তবে বিজ্ঞানীরা হাল ছাড়ছেন না। আগামী দশকে হয়তো নতুন টেলিস্কোপ তৈরি করা হবে এবং আকাশে নতুন নতুন জরিপ শুরু হবে। তখন হয়তো টেলিস্কোপগুলো আমাদের প্ল্যানেট নাইনের অস্তিত্ব প্রমাণ বা অস্বীকারের সুযোগ দিতে পারবে।

সায়েন্স অ্যালার্ট থেকে অনূদিত

সব খবর