ঢাকা, রবিবার, ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৯শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি, রাত ৮:৪৬
বাংলা বাংলা English English

বুড়িগঙ্গা নদীতে বেশি দূষণ করছে সরকারি প্রতিষ্ঠান


সরকারি প্রতিষ্ঠানই বুড়িগঙ্গা নদীতে বেশি দূষণ করছে। যদিও দখল-দূষণে বিপর্যস্ত বুড়িগঙ্গায় প্রাণবৈচিত্র্য ও স্বচ্ছ পানি ফিরিয়ে আনতে বিগত ২০১৭ সালে হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি শিল্প সরিয়ে নেয়া হয়। তারপর সরকারের বিভিন্ন সংস্থা থেকে একাধিক প্রকল্প নিয়ে ঢাকার এই প্রধান নদীকে দূষণ মুক্তির চেষ্টা চালানো হয়। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে সরকারি সংস্থাগুলোই বুড়িগঙ্গা দূষণের সঙ্গে বেশি জড়িত। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সমীক্ষায় বুড়িগঙ্গা নদীর ঢাকা অংশে ৯৫টি দূষণের উৎস চিহ্নিত হয়েছে। তার মধ্যে ঢাকা ওয়াসা ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) দূষণের উৎসই ৫৯টি। পরিবেশবিদদের মতে, সাম্প্রতিক সময়ে বুড়িগঙ্গায় শিল্পদূষণ কমলেও সরকারি সংস্থার মাধ্যমে দূষণের মাত্রা অনেক বেড়েছে। সিটি করপোরেশনের বা ওয়াসার মাধ্যমে ঢাকার চারপাশের নদণ্ডনদী দূষণ দ্রুত বন্ধ করা জরুরি। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের উদ্যোগে পাঁচ বছর ধরে দেশের ৪৮টি প্রধান নদণ্ডনদীর ওপর একটি সমীক্ষা পরিচালনা করা হয়। গত ডিসেম্বরে ওই সমীক্ষার কাজ শেষ হয়েছে। সমীক্ষায় পাওয়া তথ্যমতে, ২০১৯ সালের ২৮ এপ্রিল থেকে ২৮ জুন পর্যন্ত বুড়িগঙ্গা নদীর ওপর সমীক্ষা পরিচালনা করেন প্রকল্পের কর্মকর্তারা। ওই সমীক্ষায় বুড়িগঙ্গা নদীতে ২৫৩টি দূষণের উৎস চিহ্নিত হয়। দূষণের উৎসগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ঢাকা অংশে ৯৫টি উৎস থেকে বুড়িগঙ্গা দূষিত হচ্ছে। এর মধ্যে ৫৯টি উৎসই ঢাকা ওয়াসা ও ডিএসসিসির। দুটি সংস্থার মধ্যে ঢাকা ওয়াসার ৩০টি ও ডিএসসিসির ২৯টি উৎসের মাধ্যমে বুড়িগঙ্গা দূষিত হচ্ছে। বুড়িগঙ্গার ঢাকা অংশের বাকি ৩৭টি উৎসের মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) চারটি, শিল্পণ্ডকারখানার সাতটি, সংযুক্ত নদী ও খালের মাধ্যমে দুটি, কঠিন বর্জ্যরে স্তূপ ১২টি এবং বসতবাড়ি ও অন্যান্য উৎস ১২টি। সূত্র জানায়, হাজারীবাগের ট্যানারি শিল্পকে একটা সময় বুড়িগঙ্গা দূষণের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী করা হতো। শিল্পটি স্থানান্তরে ওই দূষণ এখন কমেছে। কিন্তু বুড়িগঙ্গা দূষণের তালিকায় এখন ঢাকা ওয়াসা ও ডিএসসিসির নাম বড় করে উঠে এসেছে। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। যদিও জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের পক্ষ থেকে বারবার নদী দূষণকারী ব্যক্তি ও সংস্থাকে সতর্ক করা হচ্ছে। চিঠি দেয়া অব্যাহত রয়েছে। ঢাকা ওয়াসার সুয়ারেজ লাইনের মাধ্যমেই মূলত বুড়িগঙ্গা দূষিত হচ্ছে। পাগলায় ওয়াসার একটি পয়ঃশোধনাগার আছে। সুয়ারেজ লাইনটা শুধু পাগলার লাইনের সঙ্গে যুক্ত করে দিলেই হয়। কিন্তু ডিএসসিসি ও ওয়াসার সমন্বয়ের অভাবে তা করা হচ্ছে না। ফলে প্রতিনিয়ত পয়োবর্জ্য বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকার চারপাশের নদণ্ডনদীতে পড়ছে। ঢাকা ওয়াসার বোর্ড সংশ্লিষ্টরাও তা স্বীকার করে জানান, সরকারি দুই সংস্থার মাঝে সমন্বয়ের অভাবে বুড়িগঙ্গা দূষণ কমানো যাচ্ছে না। একইভাবে কঠোর আইনি প্রয়োগ না থাকায়ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। নদীদূষণ রোধে পরিবেশ অধিদপ্তর মামলা করতে পারে। কিন্তু সেটাও তো সরকারি সংস্থা। এক সরকারি সংস্থা কি আরেক সরকারি সংস্থার বিরুদ্ধে মামলা করবে? ফলে ঢাকা ওয়াসা, ডিএসসিসি, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সবার অবহেলায়ই বুড়িগঙ্গা পরিষ্কার করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে এ চর্চা অব্যাহত রাখা নদীর জন্য সুখকর কোনো বার্তা নয়। প্রধানত সিটি করপোরেশনের স্লুইস গেট, খাল ও ড্রেনের পানি সরাসরি নদীতে পড়ে বুড়িগঙ্গা দূষিত করছে। এ ছাড়া সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ি থেকেও সরাসরি বুড়িগঙ্গায় বর্জ্য ফেলার অভিযোগ রয়েছে। এদিকে ডিএসসিসির মাধ্যমে বুড়িগঙ্গা দূষণের অভিযোগ মানতে নারাজ সংস্থাটির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাছের। তার মতে, ডিএসসিসি বুড়িগঙ্গা দূষণ করছে না, বরং দূষণমুক্ত করার জন্য নানা উদ্যোগ নিয়েছে। সম্প্রতি বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেল পুনরুদ্ধার ও তাতে পানিপ্রবাহ দৃশ্যমান করার মতো চ্যালেঞ্জিং কাজ এর বড় প্রমাণ।’ অন্যদিকে সার্বিক বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘দূষণকারীর উৎসের তালিকায় বেসরকারি সংস্থার নাম থাকে এটা দেখে আমরা অভ্যস্ত। কিন্তু সে তালিকায় যদি সরকারি সংস্থার নাম থাকে, তাহলে কেবল তাদের সক্ষমতা নিয়েই প্রশ্ন তোলা যথেষ্ট নয়, বরং সদিচ্ছা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। যদি একটা দেশের আদালত নদীকে জীবন্ত সত্তা বলে ঘোষণা করেন, তাহলে সে দেশের সরকারি সংস্থা কি কোনো বিবেচনায় পারে নদী বা জলাশয় দূষণের মতো কার্যক্রমকে অব্যাহত রাখতে পারে।

সব খবর