কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার চরাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকায় কয়েক বছর ধরে ধান ও পাট চাষের পাশাপাশি ভুট্টার চাষ করে আসছে কৃষকরা। চলতি মৌসুমে বিভিন্ন এলাকায় বিপুল পরিমাণে ভুট্টা চাষ করেছিল কৃষকরা। ধান চাষের চেয়ে খরচ ও রোগবালাই কম আবার ফলনও বেশি হওয়ায় বেশী লাভের স্বপ্ন দেখেছিলো এলাকার ভুট্টা চাষিরা।
কৃষি বিভাগের তথ্য মতে চলতি মৌসুমে লক্ষমাত্রার চেয়ে বেশী ভুট্টা চাষ করা হয়েছিল,সেইসাথে বাম্পার ফলনও হয়েছে। কিন্তু হঠাৎ ভুট্টার দাম কমে যাওয়ায় মুখে হাসি নেই ভুট্টা চাষিদের। মৌসুমের শুরুতে যে ভুট্টার বাজার দর ছিল মণ প্রতি ১৩শ-১৪শ টাকা। হঠাৎ সে দর ৫শ-৮শ টাকায় নেমে আসায় ভুট্টার চাষিদের মাথায় হাত পড়েছে। অধিক লাভের প্রত্যাশায় চাষিরা মোটা অংকের ঋণ এবং বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ গ্রহণ করে ভুট্টা চাষ করেছিল। ন্যায্য মুল্য না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছে ভুট্টার চাষিরা।
জানা গেছে, সরকারিভাবে ভুট্টার কোনো মূল্য নির্ধারণ কিংবা ভুট্টা কেনার উদ্যোগ না থাকায় দেশি-বিদেশি কোম্পানিগুলো তাদের ইচ্ছামতো মূল্য নির্ধারণ করে চাষিদের উৎপাদিত ভুট্টা নামমাত্র মূল্যে কিনছেন।ভুট্টা ক্রয়কারী কোম্পানিগুলো কৃষককে জিম্মি করে কম মূল্যে ভুট্টা ক্রয় করছে বলেও অভিযোগ প্রান্তিক কৃষকের।
উপজেলা কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা গেছে,চলতি মৌসুমে উপজেলার ৬ইউনিয়নে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছিল ১হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে। অথচ চাষ করা হয়েছে ১হাজার ৮২০ হেক্টর জমি।এসব জমিতে গড়ে ফলন হয়েছে প্রতি হেক্টর জমিতে ১৩মে.টন ভুট্টা। মৌসুমের শুরুতে যে ভুট্টার বাজার দর ছিল মণ প্রতি ১৩শ-১৪শ টাকা। হঠাৎ সে দর ৫শ-৮শ টাকায় নেমে আসায় ভুট্টা চাষিদের মাথায় হাত পড়েছে। উপজেলার চরাঞ্চলসহ ৬ইউনিয়নে ভুট্টার ব্যাপক ফলন হয়েছে। তবে ভুট্টার বাজারদর কমে যাওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন উপজেলার প্রান্তিক কৃষকরা।
সরেজমিনে উপজেলার রমনা ইউনিয়নের পাত্রখাতা এলাকার এরশাদুল আলম জানান,তিনি ১বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছিলেন। চাষ,বীজ,সার,পানি ও মারাই মিলে ১বিঘা জমিতে তার খরচ হয়েছে ৩৭হাজার টাকা। ওই জমি থেকে তিনি ভুট্টা পেয়েছেন ৪০মন যার বর্তমান বাজার মূল্য ৩২হাজার টাকা।অর্থাৎ লাভের আশায় হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে ভুট্টা চাষ করায় তিনি লোকসান গুনছেন ৫হাজার টাকা। এখন তিনি কি করবেন?এমন প্রশ্ন করেন এ প্রতিনিধিকে।একই এলাকার লিয়াকত আলী মাষ্টার জানান,তিনি ৩বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছিলেন।তার জমিতে ফলন ভাল হওয়ায় কোন রকমে খরচের টাকা উঠেছে। ভুট্টা চাষীদের জন্য সরকারী প্রনোদনা কিংবা স্থায়ী বাজার ব্যবস্থার দাবী জানান তিনি। লাভের আশার ভুট্টা চাষ করে ক্ষতির মুখে পড়েছেন বলে জানান,মাদারীপাড়া এলাকার সুলতান মন্ডল,কাইয়ুম মিয়া,ওয়াজেদ আলী, পাত্রখাতা এলাকার লাল মিয়া,সাহেব আলী,নয়ারহাট এলাকার মাহফুজার রহমান,হান্নান মিয়াসহ অনেকে। বর্তমান বাজার দামে ভুট্টা বিক্রি করলে পুঁজি উঠানো সম্ভব না,এমনটাই দাবী তাদের।
উপজেলা কৃষি অফিসার কুমার প্রণয় বিষাণ দাস বলেন,উপজেলার প্রান্তিক কৃষকরা এ বছর ভুট্টা চাষের প্রতি বেশি ঝুকে ছিলেন।অন্যান্য আবাদের থেকে খরচ কম হওয়ায় লাভের আশায় ভুট্টা চাষ করেছিলেন তারা।বর্তমানে বাজার মুল্য কমে যাওয়ায় তারা আয় ব্যয়ের হিসাব মেলাতে পারছেন না।