ঢাকা, সোমবার, ২৮শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৩০শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি, বিকাল ৫:১৯
বাংলা বাংলা English English

বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী, মারাত্মক পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ জরুরি


দেশে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে ডেঙ্গুজ্বর আক্রান্তের সংখ্যা। ইতোমধ্যে ৯ হাজারের বেশি রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন; তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ডেঙ্গুজ্বর আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধির কারণ মূলত এডিস মশার প্রকোপ। জানা গেছে, রাজধানীর ৪৩ শতাংশ বহুতল ভবনে এডিসের লার্ভার অস্তিত্ব মিলেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জরিপের তথ্যমতে, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকার ৫৫টি ওয়ার্ড ডেঙ্গুর উচ্চঝুঁকিতে রয়েছে। গত বছরের একই সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর তুলনায় এবার রোগী বেড়েছে ছয়গুণ। গত কয়েক বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি সবচেয়ে ভয়াবহ ছিল ২০১৯ সালে। জানা গেছে, এবার ডেঙ্গু পরিস্থিতি ২০১৯ সালের চেয়েও খারাপ হতে পারে। এবার ডেঙ্গুর মৌসুম গত বছরের মতোই দীর্ঘ হতে পারে। কাজেই কর্তৃপক্ষ এখনই যথাযথ পদক্ষেপ না নিলে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে। এ বিষয়ে আমাদের বিগত বছরগুলোর অভিজ্ঞতা মোটেও ভালো নয়। আমরা আশা করব, পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করার আগেই কর্তৃপক্ষ ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। এ ক্ষেত্রে কাক্সিক্ষত সুফল পেতে হলে সিটি করপোরেশনের কার্যক্রমের পাশাপাশি নগরবাসীকেও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। বস্তুত এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের কাজটি সহজ নয়। বহুতল ভবনের প্রতি তলায় সিটি করপোরেশনের কর্মীদের প্রবেশের কাজটি কতটা কঠিন তা সহজেই অনুমেয়। কাজেই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে নগরবাসীকে সম্পৃক্ত করার বিষয়ে গুরুত্ব বাড়াতে হবে। বছরব্যাপী মশক নিধন কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে। দুঃখজনক হলো, মশা নিয়ন্ত্রণে প্রতিবছর ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন বিপুল অঙ্কের অর্থ ব্যয় করলেও সে অনুযায়ী সেবা মিলছে না। যেহেতু ডেঙ্গু থেকে রক্ষা পাওয়ার কোনো প্রতিষেধক বা টিকা নেই, তাই সুরক্ষিত থাকার একমাত্র উপায় হলো মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষা করা। এজন্য প্রথমেই রোধ করতে হবে এডিস মশার প্রজনন ও বংশবিস্তার। কোথাও যাতে পানি জমে থাকতে না পারে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্ব হলো নগরীর সর্বত্র, বিশেষ করে যেসব স্থানে মশার বংশবিস্তারের অনুকূল পরিবেশ রয়েছে, সেসব স্থানে মশা নিধনের কার্যক্রম পরিচালনা করা। থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হলে এডিস মশার বংশবিস্তারের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এমন পরিস্থিতিতে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। কীটতত্ত্ববিদদের মতে, চলতি বর্ষা মৌসুমে সামনের দিনগুলোতে ডেঙ্গু আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। সাধারণত আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। এ সময় সবাইকে বিশেষ সচেতনতার পরিচয় দিতে হবে; বাসাবাড়ি পরিষ্কার রাখতে হবে। এডিস মশা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। তাই রাজধানীসহ সর্বত্র মশা নিধনে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে। সারা দেশে মশক নিধন কার্যক্রমে কেন কাক্সিক্ষত সাফল্য আসছে না, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। এ কর্মকাণ্ডের সার্বিক ব্যবস্থাপনা দুর্নীতিমুক্ত রাখতে হবে। মশা নিধনে সমন্বিত কার্যক্রমের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। ডেঙ্গু পজিটিভ হয়েও প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত না হলে পরে জটিলতা দেখা দিতে পারে। জটিলতা এড়াতে কারও জ্বর হলে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলতে হবে।

সব খবর