ঢাকা, সোমবার, ১৩ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৩০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৫ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি, সকাল ৮:৪৭
বাংলা বাংলা English English

আমরা ন্যায়বিচার পেয়েছি : অধ্যাপক তাহেরের কন্যা সেগুফতা তাবাসসুম


৩০ জুলাই ২০২৩: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস তাহের আহমেদ হত্যা মামলায় দুই খুনির ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন নিহতের পরিবার।
অধ্যাপক তাহেরের কন্যা সুপ্রিমকোর্টের এডভোকেট সেগুফতা তাবাসসুম আহমেদ রায় কার্যকরে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, এই ফাঁসি কার্যকরের মাধ্যমে আমরা ন্যায়বিচার পেলাম। এর জন্য দীর্ঘ ১৭ বছর ৬ মাস অপেক্ষা করতে হয়েছে।
সেগুফতা তাবাসসুম আহমেদ বলেন, আমি এই দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়া কার্যকরে নিরপেক্ষভাবে সহযোগিতা করায় সংশ্লিষ্ট আইনজীবী, পুলিশ কর্মকর্তা, গণমাধ্যমকর্মীদের আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমি মনে করি, আইন, আইনের গতিতেই চলেছে। এজন্য দেরিতে হলেও ন্যায়বিচার বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমরা এজন্য সংশ্লিষ্ট সবার কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই। হয়তো এত দিনে আমার বাবার আত্মা শান্তি পাবে।
অধ্যাপক ড. এস তাহের আহমেদ হত্যা মামলার দুই খুনির ফাঁসি ২৭ জুলাই বৃহস্পতিবার রাত ১০ টা ১ মিনিটে কার্যকর করা হয়। চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকান্ডের ১৭ বছর পর দুই খুনির ফাঁসির রায় কার্যকর করা হলো রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে।
সেগুফতা তাবাসসুম আহমেদ ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনে পড়ার সময় স্বপ্ন ছিল আন্তর্জাতিক সংস্থায় কাজ করবেন। বিশ্ব ভ্রমণ করবেন। তবে বাবার নির্মম হত্যার বিচারের জন্য দীর্ঘ ১৭ বছর ঘুরতে হয়েছে আদালত প্রাঙ্গণে। তিনি ২০০৫ সালে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনে ভর্তি হন। প্রথমে বাবাও সায় দেন। এরপর তার বাবাকে যখন হত্যা করা হলো, তখন তিনি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। মনে অনেক স্বপ্ন ছিল। ইচ্ছে ছিল আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউএনডিপি বা অন্য কোথাও কাজ করবেন। শিক্ষক হবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাবা হত্যার বিচারের জন্য লড়াই করতে হয়েছে দীর্ঘ সময়। আর এ মামলায় রায় কার্যকর হওয়া পর্যন্ত তার মা সুলতানা আহমেদ ও ভাই সানজিদ আলভি আহমেদেরও সমান কৃতিত্ব রয়েছে।
এর আগে গত ২৫ জুলাই অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা মামলায় চূড়ান্ত রায়ে মৃত্যুদন্ড পাওয়া আসামি জাহাঙ্গীরের আটকের বৈধতা নিয়ে আনা রিট খারিজের বিরুদ্ধে আবেদন খারিজ করে দেয় সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ। ফলে রায় কার্যকরের পথে বাধা কেটে যায়।
গত ২ মে আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি ও যাবজ্জীবন দন্ডিত এক আসামির আবেদন খারিজের রায় প্রকাশ করা হয়। পরে দুই আসামি প্রাণ ভিক্ষার আবেদন করেন। তা নাকচ করে দেন রাষ্ট্রপতি।
২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাবির কোয়ার্টারের ম্যানহোলে পাওয়া যায় পদোন্নতি সংক্রান্ত বিষয়ের জের ধরে নৃশংসভাবে হত্যার শিকার অধ্যাপক ড. এস তাহেরের মরদেহ। ৩ ফেব্রুয়ারি নিহত অধ্যাপক তাহেরের ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ রাজশাহীর মতিহার থানায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় ২০০৭ সালের ১৭ মার্চ ছয়জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দিয়েছিল পুলিশ।
এ হত্যা মামলার বিচার শেষে ২০০৮ সালের ২২ মে রাজশাহীর দ্রুত বিচার আদালত চারজনকে ফাঁসির আদেশ ও দুজনকে খালাস দেন। দন্ডপ্রাপ্তরা হলেন-একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, নিহত অধ্যাপক ড. তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার মো. জাহাঙ্গীর আলম, নাজমুল আলম ও আব্দুস সালাম। খালাসপ্রাপ্ত দুজন হলেন-রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের তৎকালীন সভাপতি মাহবুবুল আলম সালেহী ও আজিমুদ্দিন মুন্সী। ২০০৮ সালে বিচারিক আদালতের রায়ের পর নিয়ম অনুযায়ী ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদন্ড নিশ্চিতকরণ) হাইকোর্টে আসে। পাশাপাশি আসামিরা আপিল করেন।
শুনানি শেষে ২০১৩ সালের ২১ এপ্রিল অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা মামলায় দুই আসামির ফাঁসির দন্ডাদেশ বহাল এবং অন্য দুই আসামির দন্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদন্ডাদেশ দেন হাইকোর্ট। ফাঁসির দন্ডাদেশ বহাল রাখা দুই আসামি হলেন-একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও নিহত ড. তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার জাহাঙ্গীর আলম। ফাঁসির দন্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদন্ডাদেশ পাওয়া দুই আসামি হলেন-নাজমুল আলম ও আব্দুস সালাম।
এরপর আসামিরা আপিল বিভাগে আপিল করেন। পাশাপাশি যাবজ্জীবন দন্ডিত দুই আসামির দন্ড বাড়াতে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।
শুনানি শেষে গত বছরের ৫ এপ্রিল আপিল বিভাগ হাইকোর্ট বিভাগের রায় বহাল রাখেন। পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়, ‘আসামিদের স্বীকারোক্তিগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, হত্যার এ ষড়যন্ত্রে মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিনই মুখ্য ও সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন। আমাদের এটা বলতে দ্বিধা নেই যে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. মহিউদ্দিন শুধু প্রফেসর হিসেবে পদোন্নতি পেতেই ড. তাহেরকে এ পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেন। তার ধারণা ছিল ড. তাহের বেঁচে থাকলে অধ্যাপক হিসেবে তার পদোন্নতি পাওয়া সম্ভব না। আমাদের এও বলতে দ্বিধা নেই যে, আপিলকারী জাহাঙ্গীর আলম এবং আবেদনকারী আব্দুস সালাম ও নাজমুল আর্থিক সুবিধাসহ অন্যান্য সুবিধা পেতে অধ্যাপক তাহেরকে হত্যার জন্য ড. মহিউদ্দিনের প্রস্তাব গ্রহণ করেছিলেন। ’
১৫ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়। এরপর মৃত্যুদন্ডাদেশপ্রাপ্ত সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীর আলম এবং যাবজ্জীবন দন্ডিত সালাম রিভিউ আবেদন করেন। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি রিভিউয়ের ওপর শুনানি শুরু হয়, শেষ হয় ২৩ ফেব্রুয়ারি। রায় হয় ২ মার্চ।

সব খবর